স্টাফ রিপোটার,বাগেরহাট
বাগেরহাটে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা। এতে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম থেকে হচ্ছে চিকিৎসকদের। বাগেরহাট সদর হাসপাতাল সংলগ্ন ৫০ শয্যার ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছে ৫৬ জন। সংকট পূরণে খুলনা ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে আনা হয়েছে চিকিৎসক ও নার্স। এরপরেও থামছে না রোগী ও স্বজনদের আহাকার। এক ধরনের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বাগেরহাটে।
শনাক্তের হার বিবেচনায় এটিকে সংক্রমণের দ্রুত ঊর্ধ্বগতির একটি বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির।তিনি বলেন, গেল ২৪ ঘণ্টায় বাগেরহাটে ৩৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ১৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই হিসেবে শনাক্তের হার ৫৪ শতাংশ। এটা খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতি। পরিস্থিতি যদি আরও বেশি খারাপ হয়, তাহলে আমাদের পক্ষে সেবা দেওয়া অনেক কঠিন হবে। করোনা সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য স্থাপিত বাগেরহাট সদর হাসপাতাল সংলগ্ন ৫০ শয্যার কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ জন চিকিৎসক ও ১২ জন নার্স রয়েছে। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন তারা। জুন মাসে ৭৩ জন করোনা রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রতিদিন অন্তত ৪০ জনের বেশি ছিল রোগীর সংখ্যা। জুলাই মাসে এই রোগীর সংখ্যা আরও বেড়েছে। রোববার দুপুরে ৫০ শয্যার এই কোভিড হাসপাতালে রোগী ছিল ৫৬ জন। এই সংকট পূরণে খুলনা থেকে ৬ জন নার্স এবং বিভিন্ন উপজেলা থেকে অতিরিক্ত চারজন চিকিৎসক আনা হয়েছে কোভিড হাসপাতালের জন্য। এরপরেও সব রোগীকে সুচিকিৎসা দিতে পারছেন না তারা।
অন্যদিকে কোভিড হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট থাকলেও নেই আইসিইউ সুবিধা। আইসিইউ সেবা দিতে না পারায় স্থানান্তর করতে হচ্ছে খুলনাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে। আইসিইউ সুবিধা নিশ্চিত করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ তন্ময় তিনটি আইসিইউ শয্যা দিয়েছেন। কিন্তু প্রশিক্ষিত জনবলের অভাবে এই হাসপাতালে এখনও আইসিইউ সুবিধা চালু করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ।
কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া মাসুদ হাসান নামে রোগীর এক স্বজন বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকরা খুবই আন্তরিক। তবে নানা সংকটে রোগীরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এছাড়া হাসপাতালের কক্ষগুলোর দরজা বন্ধ করার সময় বিকট শব্দ হয়। যাতে রোগীরা খুবই বিরক্ত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক করোনা আক্রান্ত এক রোগীর মা বলেন, মানুষতো বাধ্য হয়ে হাসপাতালে আসে। একটু বেশিক্ষণ অক্সিজেন দিয়ে রাখলে চিকিৎসকরা খারাপ ব্যবহার করেন।
কোভিড হাসপাতালে নিয়োজিত পৌরসভার সিকিউরিটি গার্ড মো. এমাদুল ব্যাপারি বলেন, গেল কয়েকদিনে রোগীর সংখ্যা খুব বেড়েছে। হাসপাতালের অন্যান্যদের সঙ্গে আমিও ওয়ার্ড বয়ের মত সেবা দিচ্ছি।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির বলেন, কিছুদিন ধরে করোনা রোগী খুব বেড়েছে। সেইসঙ্গে উপসর্গসহ রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। রোগী বাড়ায় আমরা ৫০ শয্যাকে ৭০ শয্যায় রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আনা হয়েছে। আইসিইউ চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্সকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছি। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি করোনা সংক্রমণ রোধে আমরা সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিস্থিতি যদি আরও বেশি খারাপ হয়, তাহলে আমাদের পক্ষে সেবা দেওয়া অনেক কঠিন হবে। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষকে আরও বেশি সচেতন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার আহবান জানান তিনি।
এদিকে গেল ২৪ ঘণ্টায় বাগেরহাটে ৩৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ১৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় করোনা সংক্রমণ হার ৪৬ শতাংশ হলেও সদর উপজেলায় এই হার ৫৪ শতাংশ। এ সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৭৭৩ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ৮৯ জনের। সুস্থ হয়েছে ২ হাজার ৭১৯ জন। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১ হাজার ৫৪ জন।