নড়াইলের খামারিরা কোরবানির গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায়

0
569

উজ্জ্বল রায় (জেলা প্রতিনিধি) নড়াইল থেকে:
নড়াইলে কোরবানি ঈদকে সামনে বাণিজ্যিকভাবে প্রতি বছরই দেশিয় পদ্ধতিতে গবাদি পশু পালন করছে স্থানীয় খামারিরা। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর কোরবানি ঈদে জেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ১০ হাজার গরু ও ছাগল বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করেছে জেলার খামারিরা। গত বছর ভারত থেকে নড়াইলে কোরবানির হাটে পশু কম আমদানি করায় দেশি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। খামারিদের লাভও হয়েছিল আশানুরূপ। এ বছরও কোরবানিকে সামনে রেখে জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদার তুলনায় ১২ হাজার বেশি দেশি গরু ও ছাগল মোটাতাজা করেছেন খামারিরা। করোনার ২য় ঢেউ ও দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন দুশ্চিন্তায় ফেলেছে জেলার চার হাজার খামারিকে। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বছর দশেক আগে থেকে নড়াইলের খামারিরা কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে দেশিয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করণ শুরু করে। এ বছর জেলার চার হাজার এক শ জন খামারি ৩৪ হাজার আট শত আটান্নটি গরু, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করেছে। যার মধ্যে ২০ হাজার ৭৯২টি দেশি গরু, ১৩ হাজার ৯৭৩টি ছাগল এবং ৯৩টি ভেড়া রয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৫ হাজার তিন শত ছাব্বিশটি বেশি। এ বছরও তিনটি উপজেলার মধ্যে নড়াইল সদরে বেশি পশু মোটাতাজা করা হয়েছে। নড়াইল জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে চলতি বছর জেলায় তুলনামূলক কোরবানির চাহিদা বেশ কম। এ বছর কোরবানি ঈদে জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে (গরু, ছাগল ও ভেড়া) সর্বচ্চো ২২ হাজার। জেলার খামারিরা যে পরিমাণ পশু মোটাতাজা করেছে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ১২ হাজার পশু (গরু ও ছাগল) বিভিন্ন জেলায় যোগান দিতে পারবে। স্থানীয় খামারিরা জানান, গত বছর ভারতের গরু আমদানি কম থাকায় স্থানীয় গরুর চাহিদা ছিল বেশি। তাই জেলার গরু খামারিরা আশানুরূপ লাভ করেছে। করোনার ১ম ঢেউ এর পর করোনার প্রকপ অনেকটা কমে যাওয়ায় চলতি বছর জেলার অনেক খামারি গত বারের তুলনায় আরও বেশি গরু মোটাতাজা করছে। অনেক নতুন খামার গড়ে উঠছে। খামারি ছাড়াও জেলার সাধারণ কৃষকেরা বাড়তি একটি-দুটি করে গরু মোটাতাজা করছে। শেষ সময়ে করোনার ২য় ঢেউ আসায় দুচিন্তায় পড়েছে জেলার খামারি ও কৃষকেরা। মরিচপাশা গ্রামের খামারি মুজিবুলের দাবি, সারাদেশে লগডাউন থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে কোরবারির পশু বহনকারী যানবহন যেন এর আওতায় না থাকে। আরেক খামারি জি এম খাজা মিয়া বলেন, গত বছর ভারত থেকে গরু কম আসায় কৃষক ও খামারিরা লাভবান হয়েছে। সেই আশায় চলতি বছরও তার মতো শত শত কৃষক লাভের আশায় গরুমোটাতাজা করেছে। তার দারি চলতি বছরেও যেন ভারত থেকে কোরবানির গরু আমদানি না করা হয়।বর্তমানে জেলার চাষিরা শেষ সময়ে নিজ নিজ খামারের পশু মোটাতাজা করতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। চাষিরা জানান, দেশিয় পদ্ধতিতে তারা গরু মোটাতাজা করেন তাই এই জেলার গরুর চাহিদা বেশি। ঈদের সময় আকার ভেদে গত বছর প্রতিটা গরু ৪৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রয় করেন এখানকার চাষিরা। চলতি মৌসুমে জেলার খামারিরা মাঝারি সাইজের গরু বেশি মোটাতাজা করেছে। বড় গরুর সংখ্য এ জেলায় খুবই কম। খামারি ও চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় মোট যে পশু মোটাতাজা করা হয় তার ৬০ ভাগ মোটাতাজা করছে খামারিরা আর বাকি ৪০ ভাগ গরু মোটাতাজা করছে জেলার সাধারণ কৃষকেরা। প্রতিটা কৃষকের গোয়াল ঘরে তাদের হালের গরুর পাশাপাশি একটি দুটি করে মোটাতাজা করণ গরু রয়েছে। মাইজপাড়া হাটের ইজারাদার বাবুল আক্তার জানান, প্রতি বছর কোরবানি ঈদে বিভিন্ন জেলা থেকে গরু কিনতে নড়াইলে আসেন ব্যবসায়ীরা। আসছে ঈদে করোনার কারণে অন্য কোন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা আসবে কিনা জানি না। বাইরের জেলা থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা না আসলে হাটে বেচাকেনা জমবে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে খামারি, কৃষক, ইজারাদার, ব্যবসায়ীসহ সবাই। তার দাবি লকডাউনের মধ্যে কোরবানির পশুবাহী ট্রকসহ সকল যানবহন চলতে দেয়া হোক। স্থানীয় মৌসুমী গরু ব্যবসায়ী মনি মিয়া জানান, প্রতি বছর কোরবানির সময় নড়াইলের হাজার খানেক মৌসুমী গরু ব্যবসায়ী স্থানীয় খামারিদের কাছ থেকে গরু কিনে বাইরের জেলা থেকে আসা বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। আর বড় ব্যবসায়ীরা ট্রাকে এবং নৌ পথে নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে । এতে স্থানীয় কৃষক, খামারি এবং ব্যবসায়ীরাসহ সকলেই লাভবান হয়। করোনার কারণে যদি ঈদ মৌসুমে গরু ব্যবসায়ীদের লকডাউন দিয়ে আটকে দেয়া হয় তা হলে জেলার অসংখ্য খামারি, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলায় মোট ১১টি হাটে গরু বেচাকেনা হয়। ঈদকে সামনে রেখে আরও কয়েক জায়গায় অস্থায়ী গরুর হাট বসে। স্থানীয় গরুর মালিকেরা এসকল হাটে গরু বিক্রয় করেন। ১১টি হাটের মধ্যে জেলায় মোট ৪টি বড় হাট রয়েছে, মাইজপাড়া গরুর হাট, লোহাগড়া গরুরহাট, শিয়েরবর গরুরহাট, এবং পুরুলিয়া গরুরহাট। বর্তমানে এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছে জেলার প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ (খামারি, কৃষক ও ব্যাপারিরা)। নড়াইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মারুফ হাসান জানান, বছর দশেক পূর্বে নড়াইলের চাষিরা অল্প পরিসরে গরু মোটাতাজা করত। সে সময় সরকার বিদেশ থেকে ঈদের সময় গরু আমদানি করায় জেলার অনেক খামারি ও কৃষকেরা গরুর নায্য মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩-৪ বছর ধরে সরকার বিদেশ থেকে গরু আমদানি না করায় জেলার স্থানীয় কৃষকের গরুর চাহিদা ছিল অনেক বেশি। স্থানীয় খামারি ও কৃষকেরা লাভবান হয়েছে বেশ। তাই এবছরও অনেক কৃষক গরু মোটাতাজা করেছে। এবছর করোনার কারণে কোরবানির চাহিদা কিছুটা কম থাকবে। তিনি আরও বলেন, গত বছরর করোনা সংকটের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ‘নড়াইল কোরবানির হাট’ নামে মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটেরও উদ্বোধন করা হয়েছিল। জেলার খামারি, কৃষক এবং ক্রেতা এই হাটের কারণে উপকৃত হয়েছিল। চলতি বছরও জেলার কৃষক ও খামারিদের কথা চিন্তা করে এমন পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, করোনার দুর্যোগময় মুহূর্তে কোরবানির পশু ঘরে থেকেই মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কিভাবে সহজে বেচাকেনা করা যায় এই বিষয়ে দ্রুতই একটি মিটিং করে সিন্ধান্ত নেয়া হবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here