দ্রুত শক্তি হারাচ্ছে করোনা

0
355

খবর৭১ঃ করোনার অতিসংক্রামক ডেল্টা বা ভারতীয় ধরনের ভয়ে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। এই ধরনটিকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়ংকর ও মারাত্মক বলে অভিহিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এর মধ্যেই আশার আলো দেখাচ্ছে নতুন এক গবেষণা। বলা হয়েছে, শক্তির শীর্ষে পৌঁছেছে করোনাভাইরাস, যা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রূপে এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালাচ্ছে। তবে এটির ক্ষমতা এখন ক্রমেই শেষ হয়ে আসছে। বিশ্বখ্যাত ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এমনটাই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ইনসাইডার।

২০১৯ সালের অক্টোবরে চীনের উহানে প্রথম ধরা পড়ে করোনা। এরপর গত দেড় বছরে ক্রমাগত মিউটেশন ঘটিয়েছে সার্স-কোভ-২ নামের ভাইরাসটি। তৈরি করেছে আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা একাধিক ধরন। সম্প্রতি পেরুতে ল্যাম্বডা ধরনের সন্ধান মিলেছে।

বিজ্ঞানীদের দাবি, এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ধরন হচ্ছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে চিহ্নিত হওয়ার পর খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে ধরনটি।

গবেষকরা বলছেন, গত দেড় বছরে সার্স-কোভ-২ তার তেলোয়ার’ বা স্পাইক প্রোটিনের সজ্জাবিন্যাস ও গঠন ক্রমাগত বদলেছে এবং নতুন মিউটেটেড ধরন তৈরি করেছে। এভাবেই মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে লাগাতার ধোঁকা দিয়েছে সে।

তবে তার ক্ষমতা ক্রমেই কমে আসছে। গত সপ্তাহে ‘ন্যাচার’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন আমেরিকার স্ক্রিপস রিসার্চ ট্রান্সলেশনাল ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা এরিক টোপল ও ইতালির ভাইরাস বিশেষজ্ঞ রবার্তো বুরিওনি।

তারা বলছেন, করোনা রূপান্তরিত হতে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যা আরও সংক্রামক হয়ে ওঠার জন্য আর রূপান্তরিত হবে না। সেক্ষেত্রে ‘চূড়ান্ত’ একটি ভ্যারিয়েন্ট ডোমিন্যান্ট স্ট্রেইন হিসাবে আরও কিছুদিন থাকবে।

তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই সেই ভ্যারিয়েন্ট কিনা তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। কেননা ডেল্টা এখনো ডোমিন্যান্ট হয়ে ওঠেনি। তবে শিগগিরই হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভ্যারিয়েন্টটি এখন পর্যন্ত ৮০টির বেশি দেশে ছড়িয়েছে। এর মধ্যে ভারত ও ব্রিটেনে ডোমিন্যান্ট হয়ে উঠেছে।

গরিব দেশগুলোর জন্য টিকা চাইল হু : করোনা মোকাবিলায় গরিব দেশগুলোর জন্য ফের টিকার আবেদন জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ধনী দেশগুলোর কাছে এই আবেদন জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস। সেই সঙ্গে টিকার সংকট সমাধানে বিশ্ব নেতৃত্বের সমালোচনা ও নিন্দা জানান তিনি।

বলেন, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো টিকার সংকটে রয়েছে। এসব দেশে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীও টিকা পাচ্ছে না। অন্যদিকে ধনী দেশগুলোতে উচ্চ ঝুঁকিতে না থাকা তরুণদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে। খবর রয়টার্সের। বিশ্বব্যাপী জোরেশোরেই চলছে টিকাকরণ কর্মসূচি।

১৮০টি দেশে এখন পর্যন্ত মোট টিকা দেওয়া হয়েছে ২৮৫ কোটি ডোজ। কিন্তু বিশ্বের সর্বত্রই টিকার সরবরাহ সঠিকভাবে হচ্ছে না। ধনী ও উন্নত দেশগুলোতেই সবচেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে। ধনী দেশগুলোই যেহেতু টিকা উৎপাদন করছে, তাই টিকার জন্য তাদের দিকেই চেয়ে আছে দরিদ্র দেশগুলো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, ‘গরিব দেশগুলোতে টিকার অভাবে কমবয়সীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ডেল্টা প্রজাতির করোনার প্রকোপে আফ্রিকায় পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে সংক্রমণ ও মৃত্যু প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। আফ্রিকার প্রায় সব দেশই উন্নয়নশীল। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত টিকা নেই।’

সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বিশ্বের ৮৫টি দেশে সংক্রমণ ছড়িয়েছে করোনার এই ধরনটি, যা বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালাতে পারে।

এ ছাড়া করোনা মহামারির শুরুর দিকের ভেরিয়েন্ট আলফা পাওয়া গেছে ১৭০টি দেশে, ১১৯টি দেশে বিটা ও গামা পাওয়া গেছে ৭১টি দেশে। আফ্রিকার দেশগুলোতে টিকা রপ্তানি আপাতত বন্ধ রেখেছে ভারত।

আর তাতেই সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। তেদ্রোস আধানম আফ্রিকার অন্যতম গরিব দেশ ইথিওপিয়ার নাগরিক। গরিব দেশগুলোতে করোনার টিকার সংকটের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের বিশ্ব ব্যর্থ হচ্ছে। বিশ্ববাসী হিসাবে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here