খবর ৭১: এখন থেকে থানায় বা আদালতে কারও বিরুদ্ধে মামলা করার সময় বিদেশি নাগরিক বা প্রবাসী হলে পাসপোর্ট নম্বর লাগবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। ভুয়া ওয়ারেন্ট ও ভুয়া মামলায় ভুক্তভোগীদের হয়রানি বন্ধ করতে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়।
এ ছাড়া মামলার সময় যে কোনো বাদী বা অভিযোগকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এজাহারে উল্লেখ করতে হবে। তবে আদালত বা ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিলের ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট নম্বর না থাকলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী অভিযোগকারীকে শনাক্ত করবেন বলে আদেশে বলা হয়েছে।
রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ৪৯টি ‘ভুয়া’ মামলার বাদীদের খুঁজে বের করতে দায়ের করা রিটের লিখিত আদেশে গতকাল বুধবার এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরের পর লিখিত এই আদেশ প্রকাশ করা হয়।
এর আগে গত ১৪ জুন থানায় বা আদালতে কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে বাদী বা অভিযোগকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি বাধ্যতামূলক দাখিল করতে হবে বলে নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। একরামুল কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া’ মামলার বাদীদের খুঁজে বের করতে দায়ের করা রিটে ভুয়া মামলা ঠেকাতে আদালত এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে বৃদ্ধ একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ৪৯টি মামলার বাদীদের খুঁজে বের করতে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বসির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
গত ৭ জুন নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা মাথায় নিয়ে রিট করেন রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চন। রিটে গায়েবি মামলার বাদীদের খুঁজে বের করতে সিআইডির প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়। একই সঙ্গে মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একরামুল আহসান কাঞ্চন রিটে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
একরামুল আহসান কাঞ্চনের পক্ষে অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বসির এ রিট দায়ের করেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিপি, অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (এসবি), অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (সিআইডি), মহাপরিচালক র্যাব, ঢাকার পুলিশ কমিশনারসহ ৪০ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
অ্যাডভোকেট এমাদুল হক বসির বলেন, ঢাকার শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় তাঁকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। কিন্তু একটি মামলারও বাদী খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় তিনি অনেক মামলায় খালাস পেয়েছেন। তারপরও তাঁর বিরুদ্ধে এভাবে গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করায় মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। এসব মামলায় একরামুল আহসান এক হাজার ৪৬৫ দিন জেল খেটেছেন বলেও রিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
রিটকারী একরামুল আহসান কাঞ্চন বলেন, ‘হত্যা, ধর্ষণ, চুরি-ছিনতাই-চাঁদাবাজি ও মানবপাচারের মতো ভয়ংকর অপরাধের অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এমন কোনো অভিযোগ নেই, আমার ওপর প্রয়োগ করা হয়নি। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব মামলার বাদীদের খুঁজে পাইনি। এসব মামলায় দীর্ঘদিন জেলও খেটেছি। এর মধ্যে অনেক মামলায় আদালত বাদী খুঁজে না পাওয়ায় খালাস পেয়েছি।’