খবর৭১ঃ গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মর্যাদার সঙ্গে এবং শান্তিপূর্ণভাবে তাদের নিজে দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সহায়তার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাসংক্রান্ত নবম মস্কো সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি পুনরুল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, প্রায় চার বছর আগে মিয়ানমারের ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিককে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হলে, বাংলাদেশ এদের আশ্রয় দেয়। এরা বাংলাদেশ ও গোটা অঞ্চলের জন্য মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। আমরা মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু এই বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আশ্রয় দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
প্রধানমন্ত্রীর রেকর্ড করা এই বক্তৃতা তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাসংক্রান্ত নবম মস্কো সম্মেলনে সম্প্রচার করা হয়। ভার্চুয়াল প্লাটফরমে ২১ জুন থেকে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় রোহিঙ্গাদের মর্যাদার সাথে শান্তিপূর্ণভাবে প্রত্যাবাসনে সহায়তার জন্য আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষকে বঞ্চনা ও শোষণ থেকে মুক্তি এবং সকলের জন্য শিক্ষা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
এই সম্মেলন আয়োজন করার জন্য প্রধাননমন্ত্রী রুশ ফেডারেশন সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা করেন যে, এই সম্মেলন জরুরি বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করবে।
শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে মানবিক সাহায্য প্রদান, রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে নিরাপদে প্রত্যাবাসন, সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনা সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার ওপর জোর দেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সাম্প্রতিক অস্ত্রবিরতিকে স্বাগত জানাই। আমি আশা করি যে, মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে।’
দেশে দেশে সংঘাত আন্তঃদেশীয় নিরাপত্তা সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরাপত্তা সংজ্ঞায় এখন মানুষের সামরিক ঝুঁকি, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রয়োজন, অ-স্বেচ্ছাপ্রণদিত গণ অভিযোজন, পরিবেশগত নিরাপত্তা ও অন্যান্য নতুন নতুন নিরাপত্তা ঝুঁকিও অন্তর্ভুক্ত।
সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ, চরমপন্থা, বিচ্ছিন্নতাবাদ, গণ-বিধ্বংসী অস্ত্র, সাইবার অপরাধ, আঞ্চলিক সংঘাত ও প্রতিবেশগত বিপর্যয়ের কারণেই আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার নতুন চ্যালেঞ্জ ও ইস্যুগুলো আবির্ভূত হয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারিকে বর্তমান সময়ে অন্যতম বৈশ্বিক ইস্যু উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মহামারির কারণে শুধু বহু মানুষই মারা যায়নি, অধিকন্তু অর্থনীতির উপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে এবং বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ জীবিকা হারিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সকলের জন্য স্বাস্থ্য-সেবা নিশ্চিত ও বিভিন্ন খাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মহামারি মোকাবেলা করে পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রতিটি নাগরিককে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসবে। তাই সরকার সম্ভাব্য সকল উৎস থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার এই ভ্যাকসিনের জন্য রুশ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। আমি জানাতে চাই যে- বাংলাদেশের ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা রয়েছে এবং যদি উৎপাদনে যেতে পারি, তবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সহায়তা করতে পারব।’
তিনি জলবায়ু পরিবর্তনকে আরেকটি বড় ইস্যু হিসেবে অভিহিত করে বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত এই ইস্যুতে যথাযথ মনযোগী হওয়া।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। যদিও বাংলাদেশ এই মারাত্মক প্রাকৃতিক সংকটের জন্য একেবারেই দায়ী নয়। –