খবর৭১ঃ ৩৫ বছরের পর থেকে নারীদের হাড় ক্ষয় এবং উৎপাদন সমানভাবে হয় না। আমাদের হাড় তৈরি এবং হাড় ক্ষয় হওয়ার যে ব্যালেন্সটা তা ঠিক হয় না। তবে আমরা যদি সতর্ক হই তাহলে এই ক্ষয়রোধ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়ামসহ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। আর ছাড়তে হবে কিছু বদঅভ্যাস।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী রোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ ডা. দীনা লায়লা হোসেন। তার পরামর্শের আলোকে সাজানো হলো বিশেষ এ প্রতিবেদন।
হাড়ের ক্ষয়রোধে করণীয়
প্রথমে আমাদের ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে।খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারি।আমরা যদি শরীরের মাসেলগুলোকে শক্তিশালী করি। সেক্ষেত্রে হাড়ের ক্ষয়রোধে সহায়তা পাবো। এক্ষেত্রে নিয়মিত ব্যায়াম করা। তবে ওজন কমানোর জন্য ব্যায়াম করতে পারি সপ্তাহিক তিন থেকে চার দিন।
এছাড়া আমাদের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। আর হাড়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিনারেলস হলো ক্যালসিয়াম।ক্যালসিয়াম সাপ্লেমেন্ট ভালো রাখতে হবে।এক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম রিচ ফ্রুড খাব। ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে পারি। ডিম খেতে পারি। মাছ-মাংসে ক্যালসিয়াম রয়েছে প্রচুর। ছোট মাছ কাঁটাসহ খেতে পারি।নাট বা বাদাম ক্যালসিয়ামের অভাবটা অনেক ক্ষেত্রে পূরণ করে।
অনেকেই একটা বয়সের পরে দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার খেতে পারেন না।তাদের ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট দেওয়া লাগতে পারে।এছাড়াও খাবারের মধ্যে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ রিচ খাবার রাখতে হবে।ভিটামিন-ডি সবচেয়ে বেশি পাই আমরা সূর্য থেকে।বাইরের রোদ থেকে। বিশেষ করে সকাল এগারোটার যে রোদ থাকে। আমাদের বারান্দায় যেতে হবে, হাতে-পায়ে যেখানে সুযোগ আছে রোদ লাগাতে হবে।প্রতিদিন আধা ঘন্টা থেকে ১৫ মিনিট থাকা যেতে পারে। এছাড়াও খাবারগুলোকে ক্যালসিয়াম যুক্ত আছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।
ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়ামটা শোষণ করে। এক্ষেত্রে আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম থাকলেও ভিটামিন ডি না থাকলে কাজ করবে না। এছাড়াও ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি গুরুত্বপূর্ণ আমাদের শরীরের জন্য।আর এগুলোর যদি প্রয়োজন মেটাতে চাই, তাহলে আমাদের সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। সবুজ ছাড়াও কমলা রঙের যে সবজিগুলো রয়েছে, তা খেতে হবে।এছাড়াও মাছ-মাংস, প্রোটিন জাতীয় খাবার খেতে হবে।সুষম খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীর সুস্থ্য থাকে।আর এটাই সুস্থ্য থাকার মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করে।
হাড়ের ক্ষয়রোধে যেসব অভ্যাস পরিহার করতে হবে
জাঙ্কফ্রুট ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবার ছাড়তে হবে। বিশেষ করে যে মেয়েরা সিগারেট খায়, তা পুরোপুরি পরিহার করতে হবে। অ্যালকোহল জাতীয় খাবার গ্রহন ছেড়ে দিতে হবে। সফট ড্রিংকস ছেড়ে দিতে হবে।ডায়াবেটিস ও হাইফারটেনশনের মতো রোগব্যাধি থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোলেস্টেরলের পরিমাণটা রক্তে ঠিকমতো থাকে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।
হাড়ের ক্ষয়রোধে পরামর্শ
কখনো কখনো যদি রেডিয়েশন পেইন অর্থাৎ কোমর থেকে ব্যথা নেমে যাচ্ছে বা পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা হয়, তবে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।চিকিৎসক তাদের এক্সরে, এমআরআইসহ বিভিন্ন ডায়াগনসিস করাতে বলতে পারেন।চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
যদি লাইফস্টাইল ও খাদ্যাভাস পরিবর্তন করার পরেও হাড়ের ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ না হয়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
একটা বিষয় বলে রখি, মেয়েদের ক্ষেত্রে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়া যাবে না।কারণ এতে অনেক রকম ক্ষতি হয়। আবার হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।
ওজন কমানোর জন্য আমরা ব্যায়াম করতে বলি। তা কিন্তু আপনাকে হাঁটা দিয়ে শুরু করতে হবে।শুরুতেই যদি কঠিন ব্যায়াম করতে শুরু করেন, কষ্ট হয়ে যাবে।অর্থাৎ ওজন কমানোর ব্যয়াম একটু দেরিতে শুরু করবেন। তবে লিপ্ট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করতে পারেন।
অনেকের ঘুমের সমস্যা হয় অর্থাৎ রাতে ঘুম হয় না। রাতে হঠাৎ ঘাম হয়। এ সমস্যাগুলো সমাধানে প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে। খুব সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে হবে। রাত আটটার দিকে রাতের খাবারটা খেয়ে ফেলবেন। ঘুমোতে যেতে হবে তাড়াতাড়ি।রাতের জন্য কোন কাজ রাখা যাবে না। গল্পের বই, ধর্মীয় কার্যক্রমে থাকলেও ঘুম চলে আসবে। দু:শ্চিন্তা সরিয়ে নিতে হবে। ঘুমোনোর জায়গাটা সুন্দর পরিপাটি রাখতে হবে। এরপরেও সমস্যা হলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।