মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকে :
সংসার সুখের হবে এ আশা নিয়ে ভালবেসে তাঁর ভালোবাসার প্রিয় মানুষটিকে পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেন আফসা নাজ। অথচ বেছে নেওয়া জীবনসঙ্গী স্ত্রী হিসেবে স্বামী-সংসারের ভালোবাসা ও অধিকার থেকে আজ তিনি বঞ্চিত। স্বামীর বাড়িতে একাকি পড়ে থাকলেও পাশে নেই স্বামী। হঠাৎ করে তাঁর সুখের সংসারে নেমে এসেছে কালো মেঘের ঘনঘটা।অনেক দেন দরবার করেও স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মন গলাতে পারেনি। ফলে অসহায় হয়ে পড়া ওই গৃহবধূ তাঁর স্বামী ও সংসারে শান্তি ফিরে পেতে মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে একটি চিঠি পাঠিয়েছে আফসা নাজ।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন অসহায় গৃহবধূ চিঠিটি পাঠিয়েছেন সৈয়দপুর শহরের হাওয়ালদারপাড়ার ব্যবসায়ী মো. সালাউদ্দিনের মেয়ে আফসা নাজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় পাঁচ বছর আগে রংপুর কারমাইকেল কলেজে অনার্স-এ অর্থনীতি বিষয়ে অধ্যয়নকালে তাঁরই সহপাঠি রিজওয়ান আকতারের সাথে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা একে অপরকে এতটাই ভালবাসেন যে কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারেনা। তাদের প্রেমের বিষয়টি উভয় পরিবারও জানতে পারে। পরে পারিবারিকভাবে ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হাওয়ালদার পাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সালাহউদ্দিন আহমেদের কন্যা আফসা নাজের সাথে সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আকতার হোসেনের ছেলে রিজওয়ান আকতারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামীকে নিয়ে ভালোই কাটছিল তার সুখের সংসার। পাশাপাশি উভয় পরিবারের মাঝেও ছিল আত্মীয়তার অটুট বন্ধন। এরই মধ্যে আফসা নাজের সংসারে নেমে আসে অশান্তির এক প্রবল ঝড়। ভালবেসে বিয়ে করা স্বামী রিজওয়ান স্ত্রী আফসা নাজের দেয়া শুরু করে নানা অপবাদ। এতে রেজওয়ানকে সহায়তা করে তাঁর পরিবারের লোকজন। নাজের বিরুদ্ধে চলে নানা ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে একাধিক বানোয়াট অপবাদে গত ৭ মার্চ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে আফসা নাজকে এক তরফা তালাক দেয় স্বামী রিজওয়ান। সেই এক তরফা তালাকের নোটিশ কপি পাঠানো হয় সৈয়দপুর পৌরসভার আদালতে। এরই প্রেক্ষিতে পৌরসভার মেয়রের সালিশী আদালত উভয় পক্ষকে নোটিশ করে সালিশে ডাকেন। গত ১৮ এপ্রিল সৈয়দপুর পৌরসভা মেয়রের সালিশী আদালতে গৃহবধূ আফসা নাজ ও তাঁর স্বামী ছাড়াও উভয় পক্ষের অভিভাবক ও কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সকলের উপস্থিতিতে তাদের (স্বামী-স্ত্রী) জবানবন্দি নেয়া হয়। এ সময় পৌরসভার সালিশে গৃহবধূর বিরুদ্ধে তাঁর স্বামীর আনিত অভিযোগের কোন সত্যতা না পেয়ে স্ত্রী আফসা নাজকে স্বামী কর্তৃক দেওয়া এক তরফা তালাক নোটিশ অকার্যকর বলে রায় দেয়া হয়।একই সাথে আফসা নাজ ও রিজওয়ান আকতারের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বিদ্যমান রাখেন আদালত। রায়ের পরে ওই দিনই সৈয়দপুর পৌর পরিষদের পক্ষে কাউন্সিলর ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ গৃহবধূ নাজকে তাঁর শ্বশুড় বাড়িতে রেখে আসেন। কিন্তু ওইদিন থেকেই স্বামী রিজওয়ান স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে লাপাত্তা হন। তখন থেকেই গৃহবধূ তাঁর শ্বশুর বাড়িতে স্বামী ছাড়াই একাকী অবস্থান করছেন। তখন থেকেই আফসা নাজ তাঁর স্বামীর সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেনা। এমনকি রিজওয়ানের মুঠোফোনও রয়েছে বন্ধ।
তাঁর ব্যাপারে পরিবারের কোন সদস্যও মুখ খুলছেনা। তাঁর পরিবারের কাছে স্বামীর ব্যাপারে জানতে চাইলে গৃহবধূর সঙ্গে করা হচ্ছে চরম দূর্ব্যবহার। তারপরেও স্বামী ও সুখের সংসার ফিরে পেতে খেয়ে না খেয়ে প্রায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে স্বামীর বাড়িতে একটি ঘরের চার দেয়ালে একাকী হয়ে বন্দীদশায় আছেন গৃহবধূ আফসা নাজ। এমতাবস্থায় নিরূপায় হয়ে গত ১৪ জুন মানবতার মা অসহায়দের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে গৃহবধূ আফসা নাজ তাঁর লেখা একটি চিঠি রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে প্রেরণ করেন।
তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মা সম্বোধন করে সেই চিঠির শুরুতেই উল্লেখ করেছেন, শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী প্রিয় মা . . . আমার সালাম নিবেন। কেমন আছেন মা? আমার এই লেখা চিঠিখানা জানি না আপনার হাতে কবে পৌঁছাবে বা আদৌ পৌঁছাবে কিনা? মায়ের হাতে হতভাগী মেয়ের চিঠিখানা যেনো পৌঁছে রাব্বুল আলামীনের কাছে এই দোয়াই করছি। সকলেই আপনাকে স্যার বা আপা বলে ডাকে। আমি আপনাকে মা বলে ডাকলাম, আর এ জন্য আমাকে আপনি ক্ষমা করবেন। সন্তানের কাছে সবচেয়ে নিরাপদের স্থান হলো মা-বাবা। তাই আমার মমতাময়ী মাকেই মা বলে সম্বোধন করেছি। আপনিই আমার মা। আমি জানি না আমার মা আমার চিঠিখানা পড়তে গিয়ে কি ভাবছেন। শত ব্যস্ততার মাঝে আমার চিঠিখানা পড়ছেন বা অযথা সময় নষ্ট করছেন- এমনটি ভাবতে পারেন।কিন্তু আপনার মেয়ে যে আজ বড় অসহায়। তাই চিঠিখানা লিখছি। তিলে তিলে মরে যাওয়ার আগে আমার মাকে সব কথা বলে যেতে চাই। সমাজের দুষ্ট চরিত্রের মানুষের সংস্পর্শে জড়িত আমার স্বামীকে হারাতে বসেছি। স্বামীকে ফিরে পেতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, একা একা লড়েছি। কিন্তু আর পারছি না মা। দু’মাস থেকে চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী। একাকী জীবনযাপন। শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের কাছে আমি এখন বেহায়া হিসেবে পরিগণিত হয়েছি। স্বামী এখন কোথায় তা আমি জানি না। মুঠোফোনও বন্ধ। তাঁর বিষয়ে জানতে চাইলে আমার সঙ্গে কেউ ভাল ব্যবহার করে না। আমার খুব ভয় হয় মা। এভাবে যুদ্ধ করতে করতে পরাজিত সৈনিকের মতো একদিন কি আমার নিথর দেহটা মাটিতে পড়ে থাকবে ? আমি পিত্রালয়ে যেতে চাই না। আমি আমার স্বামীকে নিয়ে সংসার গোছাতে চাই। আমার স্বামীকে ফিরে পাবো কি মা?