মান্দায় সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে সাংবাদিকের উপর হামলা

0
320

সুলতান আহমেদ, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর মান্দায় জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়ের প্রতিবাদ করায় প্রসাদপুর দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা এক সাংবাদিকের উপর হামলা ও মারপিট করে টাকা ছিনতাই করেছে। হামলার স্বীকার ওই সাংবাদিক দৈনিক যুগান্তর ও জাগো নিউজ এর নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি। আহত অবস্থায় তিনি মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দিকে প্রসাদপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের ভেতরে এ হামলার ঘটনায় ঘটে।

জানাগেছে, মান্দা উপজেলার ভারশোঁ গ্রামের আসাদ আলী জমি রেজিস্ট্রি করতে প্রসাদপুর দলিল লেখক সমিতিতে আসে সাংবাদিক আব্বাস আলীর বড় ভাই আসাদ আলী। তিনি সমিতির এক দলিল লেখকের সঙ্গে আলোচনা করেন একটি দলিল ১২ লাখ টাকা মূল্যে করতে চান। যেখানে ১০.৫ টাকা হারে ১২ লাখ টাকার দলিলে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানানো হয়। বিষয়টি আসাদ আলী তার ছোট ভাই সাংবাদিক আব্বাস আলীকে জানায়। এরপর আব্বাস দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক বাবুল আক্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কিছুটা কম খরচে করার অনুরোধ জানায়।

এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আব্বাস আলী দলিল লেখক সমিতিতে স্বশরীরে গিয়ে সাধারন সম্পাদক বাবুল আক্তারের সঙ্গে দেখা করে আবারও কিছুটা কম করার অনুরোধ জানায়। কিন্তু বাবুল আক্তার তেমন গুরুত্ব না দিয়ে নিজের কাজ করেন। তিনি আবারও বাবুল আক্তারের কাছে জানতে চান সরকারি খরচ আসলে কত? এতে বাবুল আক্তার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দেওয়ালে টাঙানো কাগজ থেকে দেখে আসতে বলেন। দেখে আসা এবং বিষয়টি বুঝতে পারা সময় সাপেক্ষ এজন্য আবারও তার কাছে জানার অনুরোধ করেন। বুঝতে হলে সমিতিতে ভর্তি হতে হবে এবং ক্লাস করতে হবে বলে বাবুল জানান। এতে মনোক্ষুন্ন হয়। পরে এক পর্যায়ে সমিতি থেকে তাকে জোর পূর্বক বের করে দেয়। পরে আব্বাস প্রসাদপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে অফিসের ভেতর থেকে বের করে দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক বাবুল আক্তার ও সাংগঠনিক সম্পাদক আলামিন রানার নেতৃত্বে ১০/১২ জন কিলঘুষি মারতে শুরু করে। পরে কয়েকজন গিয়ে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়।

আহত আব্বাস আলীর বড় ভাই আসাদ আলী বলেন, জমির রেজিষ্ট্রি করতে অতিরিক্ত ফি চাওয়ার প্রতিবাদ করায় আমার সামনে ১০- ১২জন দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা ঘিরে রেখে সংঘবদ্ধভাবে আমার ছোট ভাইয়ের উপর হামলা ও মারপিট করে। আমি বাঁধা দিতে গেলে আমাকেও চড়-থাপ্পর মারে। আমি জড়িতদের কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

প্রত্যক্ষদর্শী শরিফুল ইসলাম, আমিও জমি রেজিষ্ট্রি করতে গিয়েছিলাম। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে দলিল লেখক সমিতির ১০-১২ সদস্যরা সাবরেজিস্ট্রার অফিসের ভিতরে সাংবাদিক আব্বাসকে মারপিট করতে লাগলে আমি উদ্ধার করতে গেলে আমি নিজেও আঘাতপ্রাপ্ত হই। এঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

আহত সাংবাদিক আব্বাস আলী জানান, দলিল লেখক সমিতির সাধারন সম্পাদক বাবুল আক্তারের কাছে দলিলের সরকারি খরচ জানতে চাইলে তিনি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দেওয়ালে টাঙানো কাগজ থেকে দেখে আসতে বলেন। এরপর আমি জানায় দেখে আসতে সময়ের ব্যাপার যেহেতু আপনি জানেন একটু বলেন। এতে তিনি আমাকে সমিতিতে ভর্তি হতে বলেন এবং ক্লাস করতে বলেন। এতে আমি মনোক্ষুন্ন হয়। এসময় সাধারন সম্পাদকের বাম পাশে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক আলামিন রানা আমার ওপর রেগে গিয়ে সমিতি চত্বর থেকে বের হতে করে দেয়। এরপর আমি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে যায়।
সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে প্রবেশ করা মাত্র ঘর থেকে বের করে নিয়ে বাবুল আক্তার ও আলামিন রানা সহ ১০/১২জন চারদিক থেকে ঘিরে রেখে অতর্কিত হামরা চালিয়ে মারপিট করে কাছে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেন যার মধ্য জমি রেজিস্ট্রি বাবদ নগদ তিন লক্ষ টাকা, প্যানাসনিক ৪ কে ক্যামেরা যার মূল্য এক লক্ষ ত্রিশ হাজার, একটি ল্যাপটপ যার মূল্য প াশ হাজার টাকা ছিল। সেখান ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয় কয়েকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। আমি হামলাকারী নামে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

মান্দা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার সিরাজুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি যখন ঘটে তখন আমি অফিসে ছিলাম না। বিষয়টি জানার পর আমি উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেছি। তারা কেউ বসতে রাজি হয়নি। তবে আমি বিষয়টি তদন্ত করছি।

মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) শাহিনুর রহমান জানান, ঘটনাটি আমি মৌখিকভাবে জানার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি তদন্তের জন্য। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here