উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:
গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে কাইজ্যা বিবাদ মীমাংসায় নেতাদের বা গ্রাম্য মাতবরদের বিরুদ্ধে মাশরাফীর বক্তব্য নিয়ে হই চই পড়ে যাচ্ছে। সদরের বাশগ্রাম ইউনিয়নের গোপালপুর, হোগলাডাঙ্গা, কামাল প্রতাপ ও হবখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে যেয়ে মানুষের সাথে দেখা করে কাইজ্যা বিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। এ ছাড়াও এলাকার অবহেলিত রাস্তা কালভার্ট, স্কুল, মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রকল্প আহবান করছেন।
নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক সফল অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা ঈদের পর নির্বাচনী এলাকায় এসেছেন। গত তিন/চার দিন ধরে কাঠফাটা রোদেও বৃষ্টিতে ভিজে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছেন।
নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়, সাধারণ মানুষের সমস্যা ও সমাধানের প্রাণপণ চেষ্টা, রাস্তাঘাটের উন্নয়নে অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে কিনা তা সরেজমিনে পরিদর্শন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও মানুষের প্রত্যাশা জানতে ছুটে চলেছেন।
বিভিন্ন এলাকার বিবাদ মীমাংসারও চেষ্টা করতে দেখা গেছে তাকে। ইতিমধ্যে লোহাগড়া উপজেলার ইটনা ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের একটি বিবাদ মীমাংসা করেছেন। সেখানে দীর্ঘদিন পরে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ইটনা এসপিএল প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ওই বিবাদ মীমাংসায় সবার উদ্দেশ্যে দেওয়া একটি বক্তব্য মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে।
গ্রামের সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে এমন সাবলীল ভাষায় দেওয়া বক্তব্যটি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
মাশরাফী তার বক্তব্যে বলেন, ‘ঈদের নামাজ আপনারা ৩০টা রোজা রেখেও পড়তে পারেননি! অমুক নেতা ঢাকায় বসে বলছে মাইরে দিয়ে আয়, আপনি মেরে দিলেন! মাইরে দিয়ে এসে আপনার কী হলো আপনি বুঝলেন না। সে কি আপনার মামলা লড়ে? কোনো দিন লড়েছে? জেল যা খাটার তা তো আপনারাই খাটছেন, নাকি? খাটছেন না? তারা আপনাদের কী দেয়? খাইতে দেয়? এই ধরেন আমার কথায় আপনারা এইগুলা করতেছেন, ধইরে নিলাম! আমি আপনাকে খাইতে দি? পরতে দি? ছেলেমেয়ের পড়াশোনা করাই? হাসপাতালে ভর্তি করাই? তাহলে আমি কিসের নেতা! আমার কথায় আপনি আরেকজনকে মেরে ফেলবেন!’
তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা কেউ মারামারি করবেন না। মারামারি করবেন তো খবর আছে। এবার কিন্তু কোনো পিরিত হবে না!’
এ ছাড়া মাশরাফী বিবাদ নিরসনে অনেক ধরনের পরামর্শ দেন। এ সময় লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও এলাকার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, ‘ইটনা ইউনিয়নের পাংখারচর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই গ্রামবাসীর নামে হত্যাসহ ২২টি মামলা ছিল। দেড় বছর আগে উভয় পক্ষ সম্মিলিতভাবে মামলাগুলি মীমাংসা করে ফেলে। পরে পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে সবাইকে মিলিয়ে দেওয়া হয়। মীমাংসার দেড় মাস পর থেকে আবার বিরোধের সৃষ্টি হয়। এবার নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার উপস্থিতিতে মীমাংসা করা হলো। আশা করি এখন থেকে এলাকাবাসী শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবে।’
মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার পিএস জামিল আহম্মেদ সানি বলেন, ‘সংসদ সদস্য মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা গত ১৬ মে ঢাকা থেকে নড়াইলে আসেন। গত তিন দিন ধরে নির্বাচনী এলাকা লোহাগড়া উপজেলা ও নড়াইল সদর উপজেলার ৮ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রখর রোদ উপেক্ষা করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
প্রতিদিন সকালে বাসা ও অফিসে আগত সাধারণ মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এলাকার উন্নয়নে মতবিনিময়, বিভিন্ন সড়কের চলমান উন্নয়নমূলক কাজের গুণগত মান দেখতে সরেজমিনে পরিদর্শন, নদী ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন, বিভিন্ন এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন, সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনছেন। এ ছাড়া মঙ্গলবার ইটনা ইউনিয়নের একটি গ্রামের দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান একটি বিবাদের মীমাংসা করেছেন।