শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে কয়েকজন এতিমের জমি জবর দখল করার অভিযোগ রয়েছে। এতিমরা জমি উদ্ধার করতে না পেরে অসহায় । দখলদার আওয়ামীলীগ নেতা বাজারের জমির পরিবর্তে ফসলী জমি নিতে বলছে। পুলিশ বলছে এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের আদালতের স্মরনাপন্ন হওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সখিপুর নয়ন শরীফ সরকার কান্দি গ্রামের মৃত শহিদুল্লাহ সরকারের স্ত্রী তাছলিমা বেগম জানান ৯০ নং সখিপুর মৌজার সখিপুর বাজারস্থ বিআরএস ৯৬৮ নং খতিয়ানের ১৫৪৬৮ ,১৫৪৬৭,১৫৪২৭ ও ১৬৪৬২,১৫৫২৯ নং দাগে মোট ২একর ৮৬ শতাংশ জমির মধ্যে মরহুম রশিদ সরকারের পূত্র শহিদুল্লাহ সরকার ওয়ারিশ সূত্রে ৩৯ শতাংশ জমির মালিক বনে। ২০০৮ সালে তিনি স্ত্রী তাছলিমা বেগম,৪ কন্যা সন্তান সোনিয়া,জুলিয়া ,রোজিনা ও সুফিয়া বেগম কে রেখে মারা যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে এরা এ মৃত শহিদুল্লাহ সরকারের সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির মালিক বনে। মৃত শহিদুল্লাহ সরকারের জীবদ্দশায় সখিপুর বাজারের যেখানে বর্তমানে সরকার মার্কেট নামে পরিচিত সেখানে একটি স মিল তারই ভাতিজা নাসির সরকারের ছেলে মাহবুব নাসির ওরফে কাঞ্চন সরকারের কাছে ভাড়া দেয়। শহিদুল্লাহর জীবদ্দশায় রীতিমত ভাড়া পরিশোধ করলে ও মারা যাওয়ার পরে কাঞ্চন সরকার ঐ জায়গার ভাড়া পরিশোধ করা বন্ধ করে দেয়।এরপর তাকে ঘর ছেড়ে দেয়ার জন্য তাগিদ দেয়া হলে সে ঐ জায়গা ছাড়াতো দুরের কথা সে বলে ঐ জমি শহিদুল্লাহ সরকার থেকে ক্রয় সূত্রে ভোগ করছে। এ মর্মে তারা একটি বন্টন নামা তৈরী করে। পরবর্তীকালে জানাযায় কাঞ্চন সরকারের কাছে শহিদুল্লাহ সরকার কোন জমি বিক্রি করেননি। এ নিয়ে একাধিকবার দরবার শালিস হয়। ২০২০সালে শালিস বৈঠকে কাঞ্চন সরকার কোন রেজিষ্ট্রি কাগজ পত্র দেখাতে পারেনি। পরে স্থানীয় শালিসগন এতিমের সম্পত্তি এতিমদেরকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত দেয়। এ সিদ্ধান্ত নামায় কাঞ্চন সরকার স্বাক্ষর করে ৩ দিনের মধ্যে জমির দখল বুঝিয়ে দেয়ার অঙ্গীকার করেন। ঐ সময়ের মধ্যে সে জমি বুঝিয়ে না দিয়ে বরং এতিমিদের বিরুদ্ধে কোর্টে ১০৭ ধারা একটি মামলা করে কাউকে না জানিয়ে সে আমেরিকা চলে যায়। দীর্ঘদিন পর সে দেশে ফেরার পর শালিসরা তাকে জমির দখল বুঝিয়ে দিতে বললে সে ১৫ দিনের সময় নেয়। এ সময় পার করে ও সে তালবাহানা করে জমির দখল বুঝিয়ে দেয়নি। মাহবুব নাসির ওরফে কাঞ্চন সরকার বর্তমানে সখিপুর থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি। এ প্রভাব খাটিয়ে সে জমি জবর দখল করে রাখে। খবর নিয়ে দেখা গেছে কাঞ্চন সরকার উক্ত খতিয়ানের সম্পত্তির মধ্যে মাত্র ৪২ শতাংশ জমির মালিক হয়ে ও ঐ দাগ ও খতিয়ান থেকে সে প্রথমে সখিপুর পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নামে ৩৫ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেয়। এরপর সে সখিপুর নয়ন সরকার কান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ৩৮ শতাংশ জমি দান করে দেয়। পরবর্তীতে সখিপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মুন্নু সরকারের কাছে ১০ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেয়। পর্যালোচনায় দেখা যায় কাঞ্চন সরকার ঐ খতিয়ানে জমি পাবেন মাত্র ৪২ শতাংশ । আর তিনি বিক্রি করেছেন ৭৮ শতাংশ। কাঞ্চন শহিদুল্লাহ সরকারের এতিম সন্তানদের জমি প্রভাবশালী ও আওয়ামীলীগের সভাপতি মুন্নু সরকারের কাছে বিক্রি করে দেয়ায় সেখানে শহিদুল্লাহ সরকারের রেখে যাওয়া পুরাতন ঘর দরজা ভেঙ্গে নুতন করে ঘর তুলে মুন্নু সরকার ব্যবসা বানিজ্য করে আসছে। এ ব্যাপারে সখিপুর থানা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি মাহবুব নাসির ওরফে কাঞ্চন সরকারকে বার বার তাগিদ দেয়ার পরেও সে কোন তোয়াক্কা করছেন না। শহিদুল্লাহ সরকারের বিধবা স্ত্রী ও কন্যা সন্তানেরা সুষ্ঠ বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
তারা ঐ সব দোকান দাবী করলে সখিপুর থানা পুলিশ দিয়ে তাদেরকে গ্রেফতারের ভয়ভীতি দেখায়। তারা ভেদরগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে মামলা করে ও জমি বুঝে পাচ্ছেনা। বর্তমানে মৃত শহিদুল্লাহর এতিম সন্তান ও স্ত্রী অসহায়। তারা স্থানীয় এমপি ও সরকারের কাছে সুষ্ঠ সমাধান দাবী করছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় শাহরিয়ার সরকার বলেন, উল্লেখিত সম্পত্তি মৃত শহিদুল্লাহ সরকারের ওয়ারিশদের। কাঞ্চন সরকার ঐ খতিয়ানে পাবে ৪২ শতাংশ। সে বিক্রি করে দিয়েছে ৭৮ শতাংশ । এখন ক্রেতারা জবর দখল করে ভোগ করছে। এতিমদের কোন পাত্তাই দিচ্ছেনা।
মৃত শহিদুল্লাহ সরকারের কন্যা জুলিয়া বলেন, সখিপুর থানা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি মাহবুব নাসির (কাঞ্চন) সরকার আমাদের জমি জবর দখল করে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতির কাছে বিক্রি করেছে। বর্তমানে মুন্নু সরকার আমাদের জমিতে জবর দখল করে ঘর তুলে ব্যবসা করছে। আমরা স্থানীয় এমপি ও প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চাই।
এ ব্যাপারে সখিপুর থানা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি মাহবুব নাসির (কাঞ্চন) সরকার বলেন, আমি শহিদুল্লাহ সরকারকে টাকা দিয়েছি। জমি রেজিস্ট্রেরী করে দেয়নি। আমাকে শালিসরা ১০ শতাংশ জমি দিতে বলেছে। আমি সখিপুর বাজারের জমির পরিবর্তে অন্য জায়গা দিয়ে জমি দিতে চাই। তা ওরা মানে না। ওরা আমার বিরুদ্ধে মামলা করছে।
সখিপুর থানার ওসি মোঃ আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, ভুক্তভোগীরা আমাকে শালিস নামা দেখিয়েছে। আমি কাঞ্চন সরকারকে জমি বুঝিয়ে দিতে বলেছি। সে তালবাহানা করছে। তাই আমি ভুক্তভোগীদেরকে আদালতের স্মরনাপন্ন হতে বলেছি।