খবর৭১ঃ দীর্ঘ ৬৬ বছরের মধ্যে ভারতে প্রথম কোনো নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলছে। ১০ মাসের এক শিশুসহ পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন শবনম নামে ওই নারী। হত্যাকাণ্ডের সময় শবনম অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। শবনম ও তার প্রেমিক সেলিম হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। আদালত তাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শবনমের আইনজীবীরা তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
শবনমের আইনজীবী শ্রেয়া রাস্তোগি বলেন, তার মক্কেল শবনম কখনোই নিজের দোষ স্বীকার করেননি। শবনমের ছেলে বিট্টুও (ছদ্মনাম) তার সঙ্গে ওই কারাগারে রয়েছেন। ছেলের কথা ভেবে শবনমের সাজা কমানো উচিত। ১২ বছরের বিট্টু ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে তার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে।
জানা যায়, শবনম ও সেলিম উত্তর প্রদেশের বাওয়ান খেরি গ্রামে বসবাস করতেন। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে পরিবার তা মেনে নেয়নি। হত্যাকাণ্ডের সময় শবনমের বয়স ছিল ২২ বছর। সেলিমের বয়স ছিল ২৪ বছর। শবনম শিক্ষকতা করতেন। আর সেলিম বেকার ছিলেন। শবনম ছিলেন সাইফি বংশের। আর সেলিম ছিলেন পাঠান বংশের। পরিবার নিজ বংশের মধ্যে তাদের বিয়ে দিতে চেয়েছিল। এ জন্য চাপও প্রয়োগ করত।
জেলা জজ আদালত সাতজনকে হত্যার দায়ে শবনম ও সেলিমকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। তারা উত্তর প্রদেশের হাইকোর্টে আবেদন করেন। তবে সেখানে আবেদন নাকচ হয়। শবনম ও সেলিমের সন্তান বিট্টু কারাগারেই জন্ম নেয়। কারাগারেই মায়ের সঙ্গে বড় হয়েছে বিট্টু। শবনমের কলেজের বন্ধু উসমান সাইফি বিট্টুকে লাল–পালন করতে চেয়েছেন।
বিচারকাজ চলার সময় শবনম অভিযোগ করেন, সেলিম একাই সবাইকে হত্যা করেছেন। আর সেলিম বলেছেন, শবনম সবাইকে হত্যার পর তাকে ডেকেছিলেন।
তবে সেলিম স্বীকারোক্তিতে বলেন, ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল শবনম তার পরিবারের সবাইকে সিডেটিভ দিয়ে ঘুম পাড়ান। এরপর সেলিম ও শবনম পরিবারের সবাইকে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করেন।
স্বীকারোক্তিতে সেলিম বলেন, তিনি ও শবনম একে অন্যকে ছাড়া বাঁচতে পারবেন না। শবনমের পরিবার তার সঙ্গে সেলিমের বিয়ে দিতে রাজি ছিল না। সেলিমের সঙ্গে মেশার জন্য শবনমের পরিবার তাকে মারধর করত। এ কারণে তারা পরিবারের সবাইকে হত্যা করেন।
আদালতে শবনমের স্বজন সুখন আলী বলেন, সেলিম প্রায়ই শবনমের বাসায় তার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। তবে শবনমের বাবা তা পছন্দ করতেন না। প্রায়ই তিনি শবনমকে মারধর করতেন। সেলিমের সন্তানও গর্ভে ধারণ করেছিলেন শবনম।
তবে হত্যাকাণ্ডের সময় শবনম যে অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, তা জানতেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। সে সময় তিনি আট সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। শবনম তার পরিবারের সবাইকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। এভাবে তিনি পুরো সম্পত্তির দখল নিতে চেয়েছিলেন। যাতে সেলিমের সঙ্গে বাকি জীবন কাটাতে পারেন।