খবর৭১ঃ
কোভিড-১৯ মহামারিতে বিধ্বস্ত ভারত। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভেঙে পড়েছে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। রাত পোহালেই সংক্রমণ ও আক্রান্তের নতুন রেকর্ড শুনতে পাচ্ছেন ভারতীয়রা।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে দুই হাজার ৭৬০ জনের প্রাণ কেড়ে নিল সর্বনাশা করোনাভাইরাস। রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভির খবরে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, চতুর্থ দিনের মতো সংক্রমণ তিন লাখের গণ্ডি পেরিয়েছে রোববার। নতুন তিন লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন, যা বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড। গত তিন দিনে দেশটিতে ১০ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেন।
আর নতুন ২৭৬০ জন নিয়ে দেশটিতে গত তিন দিনে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়াল সাড়ে ৭ হাজারে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৬২৪ জন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় যদিও শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান বলছে— দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেবে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক পেছনে ফেলেছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ হাজার ৬৪৫ জন, মারা গেছেন ৭৪২ জন।
যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, এমনকি দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর হিসেবে ভারতের ধারেকাছে নেই তার প্রতিবেশী দেশগুলোও। শুক্রবার যেখানে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তিন লাখ ৪৬ হাজার রোগী, সেখানে একই দিন পাকিস্তানে করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮৭০ এবং বাংলাদেশে ছিল তিন হাজার ৬২৯ জন। নেপাল ও শ্রীলংকায় শুক্রবার দৈনিক সংক্রমণ ছিল যথাক্রমে দুই হাজার ৪৪৯ এবং ৯৬৯ জন।
গত মার্চ থেকে ভারতে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও সেটি প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া শুরু করেছে ৬ এপ্রিল থেকে। এই দিনই ভারতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ অতিক্রম করা শুরু করে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও পৌঁছায় হাজারের কাছাকাছি।
বর্তমানে ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে করোনা সংক্রমণে শীর্ষে আছে মহারাষ্ট্র। শনিবার দেশটিতে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৭ হাজার ১৬০ জন। এই দিন রাজ্যটিতে করোনায় মারা গেছেন ৬৭৬ জন।
এ নিয়ে ভারতে করোনায় সংক্রমণ এক কোটি ৬৯ লাখ ৫১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন এক লাখ ৯২ হাজার ৩১০ জন।
করোনার বৈশ্বিক সংক্রমণে ভারতের অবস্থান দ্বিতীয় আর মৃত্যুতে চতুর্থ। মৃত্যু ও আক্রান্তে সবার শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র।
আনন্দবাজার জানায়, ব্রিটেনের অভিজ্ঞতা দেখে গত নভেম্বরেই বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ভারতে কোভিড সংক্রমণের আরও মারাত্মক দ্বিতীয় ঢেউ আসতে চলেছে।
বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, ওই সতর্কবার্তা সত্ত্বেও পরিকাঠামোগত উন্নতির দিকে কেন্দ্রীয় সরকার মনোযোগ না-দেওয়ার খেসারত এখন দিতে হচ্ছে ভারতকে।
সংক্রমণ বাড়ায় বেশ কয়েকটি রাজ্যে লকডাউন ও কারফিউ জারি করা হয়েছে। দিল্লির কারফিউ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর চিন্তা চলছে বলে এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে।