খবর৭১ঃ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দ্বিতীয় দফায় সাতদিনের লকডাউন চলছে দেশে। বন্ধ আছে সব গণপরিবহনসহ দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহনও। সরকার তরফে এরই মধ্যে আভাস মিলেছে ২৮ এপ্রিলের পর আর দীর্ঘ হবে না লকডাউন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ চলাচলে বিধিনিষেধের নির্দেশনা আসবে। প্রশ্ন উঠেছে, কবে থেকে সচল হবে গণপরিবহনসহ দূরপাল্লার যান? পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউন উঠে যাওয়ার পরদিন অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল ভোর ছয়টা থেকে সড়কে ফের পরিবহন নামবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করতে হবে তাদের।
গণপরিবহন চলাচলের বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে আসেনি। তবে পরিবহন খাতের কয়েকজন মালিক জানিয়েছেন, তারা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা পরিবহন চলাচলের নিষেধাজ্ঞা ২৯ এপ্রিল থেকে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তবে তা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধির যথাযথ মেনেই।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় প্রথম পর্যায়ে গত ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়। লকডাউনের সুফল পাওয়ার জন্য এ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ফের আরও এক সপ্তাহ অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের সময় লম্বা করে সরকার। এদিকে চলমান লকডাউনের মধ্যেই আগামীকাল রবিবার থেকে শপিংমলগুলো খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার মো. এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আশা করছি ২৯ এপ্রিল সকাল থেকে রাস্তায় বাস চলবে।’
সরকারের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৈঠক হয়নি। তবে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করছি ২৯ এপ্রিল থেকে বাস চলবে।’
দূরপাল্লার বাস চলবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, সবই চালু হবে একবারে। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে।’
এর আগে গত ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল সরকার। পরে তা শিথিল করে শুধুমাত্র সিটির মধ্যে সীমিত আকারে যান চলাচল ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খুলে দেওয়া হয় শপিংমল।
সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান বলেন, ‘করোনা ভাইরাস বেড়েছে এ জন্য সকলকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তবে বাস না চললে তো পরিবহণ শ্রমিকদের পেটে ভাত হয় না। আমরা সরকারের কাছে দাবি করেছিলাম প্রত্যেক শ্রমিককে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে আনা হোক। সরকারও আগ্রহী ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ ও কিছু শ্রমিক নেতা মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করে তা বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছে না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে বাস চলাচল ছাড়া আর উপায় নেই।’
শ্রমিকের নিয়োগ এবং কল্যাণ তহবিলের টাকা পেলে কেউ বাস নিয়ে বের হতো না দাবি করে তিনি বলেন, ‘সরকার থেকে পরিবহণ শ্রমিকদের প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হলেও তা আমরা পাইনি। তাছাড়া শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে যে পরিমাণ টাকা আছে, তা দিলেও আমরা ছয়মাস বসে খেতে পারতাম। কিন্তু সেসব টাকাও নেতারা দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে করোনা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নামতে হচ্ছে।’
এদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, আগামী ২৮ এপ্রিলের পর চলমান বিধিনিষেধ আর থাকছে না। ধীরে-ধীরে সবকিছু খুলে দেওয়া হবে। তবে মানুষকে মাস্ক পরতে হবে, শারীরিক দূরত্ব মানতে হবে। বিধিনিষেধ না থাকলেও জীবনযাত্রার বিষয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা থাকবে। এ ব্যাপারে ২৮ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গণপরিবহন চালু হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলতে হবে। যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহনে উঠবেন এবং যাত্রার সময়েও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এভাবে চললে সংক্রমণ অনেকটাই কমে যাবে।
বিধিনিষেধের মধ্যেই সরকার আগামীকাল থেকে দোকানপাট ও শপিংমল খোলার অনুমতি দিয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দোকানপাট ও শপিংমল খোলা থাকবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে বেচাকেনা করতে হবে।