হাজার টাকা মণে ১৪ লাখ টন ধান কিনবে সরকার

0
305

খবর৭১ঃ কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, হাওরে বোরো ধানের উৎপাদন বাড়াতে বর্তমান সরকার নানামুখী কর্মসূচির গ্রহণ করেছে। হাওরে সেচ সুবিধা বাড়াতে খাল খনন করা হচ্ছে এবং ধানের উৎপাদন বাড়াতে উন্নত জাতের বীজ, সার, কীটনাশকসহ কৃষকদের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, এমন দাম দিব যাতে কৃষকরা খরচ তুলেও লাভ করতে পারে। কৃষক যাতে এক হাজার টাকার কম না পায় সেই দামে আমরা ১৪ লাখ টন ধান কিনব। এবারের মৌসুমে সফলভাবে বোরো ধান ঘরে তুলতে পারলে করোনাকালেও দেশে খাদ্যের কোনো সংকট হবে না বলেও জানান তিনি।

কৃষিমন্ত্রী শুক্রবার হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা গ্রামে হাওরে ‘বোরো ধান কর্তন উৎসব’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বানিয়াচং উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, বিএডিসির চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ, ব্রির ডিজি ড. মো. শাহজাহান কবীর, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্যা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের উপপরিচালক মো. তমিজ উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মন্ত্রী বলেন, হাওরের বিশাল জমিতে বছরে মাত্র একটি ফসল বোরো ধান হয়। এ ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে কৃষকদের উন্নত জাতের হাইব্রিড বীজ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া হাওরের অনেক জায়গায় সেচের অভাবে জমি পতিত থাকে বা সেচের প্রয়োজন হয়। এসব জায়গায় সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য বিএডিসির মাধ্যমে খাল খনন ও পুনঃখননের জন্য শিঘগিরই প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, মহামারি করোনাকালে খাদ্য নিয়ে মানুষকে যাতে আতঙ্কে থাকেত না হয়, খাদ্যের যাতে কোনো অভাব না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। এবার বোরোর আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি হয়েছে। এবছর বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হয়েছে, তারপরও ভালো ফলন হবে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও হাওরসহ সারা দেশের বোরো ধান সফলভাবে ঘরে তুলতে পারলে দেশে খাদ্য নিয়ে সংকট থাকবে না। দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

পরে কৃষিমন্ত্রী বানিয়াচংয়ের হাওরে ধান কাটার উদ্বোধন করেন ও ভর্তুকির আওতায় ধান কাটার যন্ত্র কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার কৃষকের মাঝে বিতরণ করেন। এ ছাড়া তিনি ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক কার্যালয় পরিদর্শন করেন।

যন্ত্র বিতরণ শেষে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকের অকৃত্রিম বন্ধু। তিনি অত্যন্ত উদারভাবে কৃষকদেরকে নানা প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছেন। শতকরা ৭০ ভাগ ভর্তুকিতে অর্থাৎ ২৮ লাখ টাকার কম্বাইন হারভেস্টারের ২১ লাখ টাকাই সরকার দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকদরদী বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, হাওরে অনেক সময় আগাম বন্যা এসে ধান নষ্ট করে ফেলে। সেজন্য, দ্রুততার সাথে ধান কাটার জন্য যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। আগামীতে আরও বেশি করে দেওয়া হবে, ২ বছর পরে ধান কাটার যন্ত্রের কোনো অভাব হবে না, হাওরে যত যন্ত্রের প্রয়োজন হবে তা দেওয়া হবে।

ড. রাজ্জাক বলেন, গত বোরো মৌসুমে ধানের ভাল উৎপাদন হয়েছিল, কিন্তু আউশ-আমন মৌসুমে দফায় দফায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদন অনেক কম হয়েছিল। ফলে ধান চালের দাম বেশি ছিল। সেজন্য এ বছরের শুরুতেই যে কোনো মূল্যে বোরো ধানের উৎপাদন বাড়াতে সর্বাত্মক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সরকারের নানান উদ্যোগের ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। একইসঙ্গে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। আশা করা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরোতে ৯ থেকে ১০ লাখ টন বেশি উৎপাদন হবে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে ধান কাটায় এগিয়ে আসার ও এ বিষয়ে যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান কৃষিমন্ত্রী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here