সৈয়দপুর প্রতিনিধি:
সারাদেশে ভয়াবহ হয়ে ওঠা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আট দিনব্যাপী শুরু হওয়া কঠোর লকডাউন সৈয়দপুরে ঢিলেঢালাভাবে চলছে। লকডাউন কার্যকর করতে উপজেলা ও থানা প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও জনগণের মাঝে লকডাউন সম্পর্কে তেমন ভীতি দেখা যাচ্ছে না। গণপরিবহন বন্ধ ছাড়া সরকারের সকল নির্দেশনা পালনের কোন বালাই নেই সৈয়দপুরে। করোনা সংক্রমণের কারণে মৃত্যুর হার ও আক্রান্তের বিবেচনায় সচেতন মানুষ লকডাউনের পক্ষে কথা বললেও বাকিরা বলছেন কর্ম বন্ধ থাকলে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে তাদের না খেয়ে থাকতে হবে। আবার আর্থিক ক্ষতি হবে বলে দাবি করছেন ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা।
সূত্র মতে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সামাল দিতে গত বুধবার মধ্যরাত থেকে আগামী ২১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে সব ধরণের অফিস ও বাস, ট্রেন ল সহ পরিবহন চলাচল বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। প্রজ্ঞাপন আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত অফিস এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে জানিয়ে বলা হলেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শিল্প-কারখানা চালু থাকার কথা বলা হয়। সীমিত সময়ের জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে এবং কাঁচা বাজারে বেচাকেনা হবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। হোটেল-রেস্তোরা নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য খাবার বিক্রি ও সরবরাহ করতে পারবে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে পারবে না কেউ।
সরকারের এসব নির্দেশনা মতে শুধুমাত্র গণপরিবহন চলাচল, অফিস-আদালত বন্ধ থাকলেও সৈয়দপুরে অন্যসব বিধি নিষেধ পালন হতে দেখা যাচ্ছে না। সৈয়দপুরের বাজারে চলছে লকডাউন লকডাউন খেলা। প্রশাসন আসলে দোকানপাট বন্ধ আর চলে গেলে আবার খোলা। গতকাল বৃহস্পতিবার গোটা শহরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। গোটা শহর ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, রিক্সা, ভ্যান, অটোরিক্সার চলাচল ছিল অবাধ। হোটেল রেস্তোরায় দেখা গেছে প্রচন্ড ভীড়। দোকানপাট ছিল আংশিক খোলা। মানুষজনের ভীড়ে বোঝার উপায় নেই যে, সৈয়দপুরে লকডাউন চলছে। নেই কোন স্বাস্থ্যবিধি। মানুষজন মুখে মাস্ক পরা ছাড়াই অবাধে চলাচল করছে। অনেক দোকানাীর মুখেও ছিলনা কোন মাস্ক।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত বিভিন্ন সড়ক ও মার্কেটে দেখা গেছে এমন চিত্র। লকডাউন প্রসঙ্গে কথা হয় আনোয়ার আলম নামের এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার সাথে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে লকডাউনের খুবই প্রয়োজন। আলমগীর হোসেন নামে একজন ব্যাংকার বলেন, লকডাউনে খেটে খাওয়া মানুষসহ ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি হবে এটা ঠিক। তবে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে লকডাউনের বিকল্প ছিলনা। তিনি বলেন জীবন থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে ভবিষ্যতে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কাপড়, কসমেটিক্স, পাদুকসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, গত বছর থেকে শুরু হওয়া করোনার প্রভাবে তাদের ব্যবসা বাণিজ্য লাটে উঠেছে। সে ক্ষতি এখনও সামাল দিতে পারেননি তারা। তার উপরে নতুন করে লকডাউনের কারণে আরও বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করা অপরাধ জেনেও লকডাউনে ব্যবসা পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন। তারা যদি ব্যবসা না করতে পারেন তাহলে গোটা সৈয়দপুরে ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। রমজান মাস উপলক্ষে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালনের নির্দেশনা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
রিক্সাচালক কামাল, ভোলা, অটোচালক, সাইফুল, জলিলসহ অনেকেই জানান, পেটের তাগিদে তারা যানবাহন নিয়ে বেরিয়েছেন। তারা বলেন লকডাউনের প্রথম দিন তাদের তেমন কোন রোজগার হয়নি। আর আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১টা পর্যন্ত এক থেকে দেড়শ টাকা উপার্জন করেছেন। দিনের বাকি সময় পর্যন্ত কি হবে তা জানেন না তারা।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাসিম আহমেদ বলেন, করোনার সংক্রমণ সামাল দিতে সরকারি নির্দেশনা মতে প্রশাসন মাঠে রয়েছে। যেখানে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে সেখানেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। (ছবি আছে)