আমিনুল ইসলাম বজলু,পাইকগাছা (খুলনা) ঃ পাইকগাছা সহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে গো খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা
দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উচ্চ মূল্য দিয়ে খড়, বিছালি কিনে গো- খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। এতে করে এলাকার হাজার হাজার কৃষক ও গো-খামারীরা হিমসিম খাচ্ছে। অনেকে গো-খাদ্য সংকটের কারণে গরু ছাগল বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। কিস্তিনামা বা সুদের টাকার জন্য পাওদাররা বার বার তাগেদা
দিচ্ছে। ফলে গরু চাষে মানুষের আগ্রহ হারাচ্ছে বা উদ্যোক্তাদের অভাব হচ্ছে।
সরজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ অঞ্চলের মানুষের নিত্য সঙ্গী হলেও সকল বিপর্যয় কাটিয়ে জীবন- জীবীকার তাগিদে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া জাতীয় গো পালন করে আসছে। উপজেলা পাইকগাছা, কয়রা, আশাশুনি সহ বিভিন্ন অঞ্চল সর্বশেষ আম্ফানে কারণে বেঁড়িবাঁধ ভেঙ্গে লবণ পানি ঢোকা, বন্যা, জলবদ্ধতা, মৎস্য লীজ ঘের ও তরমুজের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় গরুর চারণ ভূমির সংকটের কারণে গো-খাদ্যের সংকট দেখা যায়। আবাব এদের একাংশসহ তালা, সাতক্ষীরা অঞ্চলে জলাবদ্ধতায় আমন চাষ না হওয়া, দকোপ ওপাইকগাছার উপজেলা দেলুটি, গড়ইখালীতে তরমুজ সহ বিভিন্ন শস্য আবাদের বেড়ে যাওয়ার ফলে চারণ ভূমি কমে যাওয়াতে গো-খামারীরা বিপাকে পড়েছে। মাঠে গরু, ছাগল, ভেড়া চরাতে পারে না। বাকী এলাকা সারা বছর পানি থাকে।
পাইকগাছায় দেশী গরু প্রায় ৪৭ হাজার ২শত ৭৫টি, শংকর জাত বা উন্নত জাতের ৩হাজার ৪শ’ ৫০টি, মহিষ ২শ উর্ধ্বে, ছাগল প্রায় ৩৫ হাজার এবং ভেড়া ২১হাজার রয়েছে বলে উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান।
প্রসঙ্গত, তথ্য হিসাবে এদের জন্য যে পরিমাণ চারণভূমি বা আশঁ জাতীয় খাদ্যের প্রয়োজন তার ১০% নেই বললেই চলে। পাইকগাছার সরল গ্রামের সুবোল মন্ডল, শিববাটীর দুলাল সানা, কিরণ মন্ডল ও ভিলেজ পাইকগাছার খানজাহান জানান, আমাদের সারা বছর গরুর দুধ, গোবর, বিক্রয় করে কোন মতে সংসার চলে। এবছর গরুর খাদ্য সংকটের কারনে গরু,ছাগল নিয়ে বিপাকে আছি। কারোর বাড়ি, ক্ষেতে, বাগানে গেলে বকুনি শুনতে হয়, কেউ খড়ে দিলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, অনেকে কোর্টে চালান দেন। খর আগে কিনতাম ৫শ’ টাকায় সেই খর এবার কিনতে হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টাকায়। এতে করে গরু ছাগল প্রতিপালন আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে। গোপালপুরের মোহাম্মাদ আলী জানান, আমার ৩২টি গরুর জন্য দিনে ১০হাজার টাকা মত খরচ
পড়ে। দানাদার খাবারের মূল্য উর্ধ্বমূখী এবং দুধের বাজার মূল্য কম হওয়ায় খামার টিকে রাখা সম্ভব হবে না। কয়রার চন্ডীপুরের শরৎ ঢালী, হাতিয়ারডাঙ্গার দেবব্রত, তালার মেশারডাঙ্গা গ্রামের গোবিন্দ,চিত্ত, অনন্ত বাছাড়রা জানান, গরুর কষ্টচোখে দেখা যায় না, না খেতে পেরে কঙ্কালসার। সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত
বিভিন্ন মাঠে, জমির আইল, বাগান থেকে ঘাস,লতাপাতা জোগাড় করতে হয়। ঠিকমত খাদ্য দিতে না পারায় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছি। কেউ বিভিন্ন সমিতি এনজিও, যুব উন্নয়ন অফিস থেকে ঋণ করে, কেউ সোনা বন্ধক রেখে, চড়া সুদে ঋনের নিয়ে অধিক লাভের আশায় গরু, ছাগল, ভেড়া চাষ করছে। এবছর
গো-খাদ্যের সংকটের কারণে এসকল অঞ্চলের গো-খামারীরা চরম বিপাকে পড়ছে।
পাইকগাছা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বিষ্ণুপদ বিশ্বাস জানান, ব্যাপক লবনাক্ততা, মৎস্য ঘের, তরমুজের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় গরুর চারণ ভূমি কমে যাচ্ছে। দানাদার খাবারের মূল্য উর্ধ্বমূখীর হওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট মোকাবেলায় আমরা উন্নত জাতের ঘাসের (নেপিয়ার, পাক চং) চাষে খামারীর
উদ্বুদ্ধ করছি। দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি ঘাসের চাষ করলে খামারীরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবে। গো-খাদ্যের সংকট মোকাবেলায় দানাদার খাদ্যের বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপশি ঋনের সুদের হার কমানো এবং আর্থিক সহায়তা কামনা সহ প্রয়োজনী ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন
খামারীগণ।