খবর৭১ঃ আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে এক সপ্তাহের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোর লকডাউনের কোনো বিকল্প নেই; স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এমন অবস্থানকে সমর্থন করলেও লকডাউনের প্রভাবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কত মানুষ বেকার হবে এবং সরকারি চাকরিজীবীর বাইরে সাধারণ মানুষ কিভাবে তাদের সংসারের ব্যয় বহন করবে এমন প্রশ্ন দেশের ব্যবসায়ী মহলসহ সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের। তারা মনে করেন, লকডাউনে লন্ডভন্ড হয়ে পড়বে দেশের অর্থনীতি। এ অবস্থায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গার্মেন্টসহ শিল্পকলকারখানা চালু রাখার বিষয়টি সরকার বিবেচনায় নেবে, এমনটাই আশা করছেন ব্যবসায়ী মহলসহ সংশ্লিষ্টরা।
দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৮৫ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। এদের বেশিরভাগই দিন আনে, দিন খায়। প্রায় ১৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতেই বেশি। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশে কঠোর লকডাউন আরোপ করে সার্বিক অর্থনীতির চাকাকে কিভাবে সচল রাখা হবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হলে অনেকের চাকরিচ্যুত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের দায়-দেনা ও কিস্তি পরিশোধের চাপও রয়েছে। কঠোর লকডাউনের ফলে দেশের বিরাট জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় মোটাদাগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে-একেবারে ভিক্ষুক থেকে সমাজের উচ্চবিত্ত শিল্পপতিরাও ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
সামনে আসছে ঈদ। এ জন্য সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধের বড় চাপ অপেক্ষা করছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, করোনার প্রথম ধাক্কার ক্ষতি এখনো উদ্যোক্তারা কাটিয়ে উঠতে পারেননি; এরই মধ্যে দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হয়ে গেছে। ফলে সব কিছু তছনছ হতে চলেছে। এবারের ধাক্কার প্রভাব দীর্ঘায়িত হলে এবং সরকার উদ্যোক্তাদের পাশে সময়মতো না দাঁড়ালে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টদের পথে বসার উপক্রম হবে, এমনই আশঙ্কা অনের্কেন। লকডাউনের প্রভাবে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। এতে উদ্যোক্তারা যেসব পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করছেন বা করবেন, সেগুলো বিক্রি করা সম্ভব হবে না। রপ্তানিনির্ভর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বায়ারদের অর্ডার বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু ব্যাংক থেকে সুদের হিসাব কষা থামবে না। জানা গেছে, গত বছর যারা বেকার হয়েছেন তাদের অনেকে এখনো চাকরি ফিরে পাননি। বিকল্প কর্মসংস্থানে যুক্ত হওয়া অনেকের জন্য কঠিন ও বিব্রতকর। ৫০ শতাংশের বেশি মানুষের আয় কমে গেছে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সেভাবে সৃষ্টি হচ্ছে না।
করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউনের বিকল্প নেই; একইসঙ্গে দেশের অর্থনীতিকেও সচল রাখা জরুরি। ফলে সরকারকে এ দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করে মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করতে হবে; হাসপাতালে আইসিইউ বেড বাড়াতে হবে; বেসরকারি খাতেও হাসপাতালের অনুমোদন আরও বাড়াতে হবে এবং সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করতে হবে।