সেনাবাহিনীর সহযোগীকে হত্যা, মিয়ানমারে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড

0
274

খবর৭১ঃ
মিয়ানমার সেনাবাহিনী ক্যাপ্টেনের এক সহযোগীকে হত্যার দায়ে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে জান্তা সরকার। সেনাবাহিনী পরিচালিত মিয়াওয়াডি টেলিভিশনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়েছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনাঅভ্যুত্থান সংগঠিত হওয়ার পর এই প্রথম জনসম্মুখে কোনো রায় ঘোষণা করা হলো।

টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৭ মার্চ মিয়ানমারের সর্ববৃহৎ শহর ইয়াঙ্গুনের ওক্কালাপা জেলায় এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। এরপর ওই জেলায় সামরিক আইন ঘোষণা দিয়ে সামরিক আদালতকে ( কোর্ট মার্শাল) রায় দেয়ার এখতিয়ার দেয়া হয়।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিসহ তার রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির নেতৃত্বস্থানীয় ২০ এর অধিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। এরপর গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে তারা জরুরি অবস্থা জারি করে। কিন্তু মিয়ানমারের সাধারণ জনতা সামরিক শাসন প্রত্যাখান করে এর বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ শুরু করে।

গতকাল শুক্রবার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতাদের ক্ষমতাচ্যুত করা সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দাবি করেন, তাদের শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ক্রমশ কমছে। কারণ হিসেবে মানুষ শান্তি চাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সামরিক সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেন, ‘যারা শান্তি চান, তাদের সহযোগিতার কারণে বিক্ষোভ থামানো হয়েছে। আমরা সবাইকে নিরাপত্তা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করছি।’

দেশটিতে বিক্ষোভকারীদের দমাতে সামরিক অস্ত্র ব্যবহারের খবরকে অস্বীকার করেছেন তিনি। তিনি জানান, ২৪৮ জন নিহত হয়েছেন। ১৬ জন পুলিশও মারা গেছেন।

অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস জানিয়েছে, মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী এবং পুলিশের গুলিতে ৪৮ শিশুসহ ৬১৪ জনের অধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় তিন হাজার। জাতিসংঘসহ পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারের জান্তা সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবুও জান্তা সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে জান্তার সহিংস বিক্ষোভ দমনের মধ্যে মানুষের প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে।

মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত সাংসদদের আইনজীবীরা জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের প্রতি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত আইন প্রণেতাদের নিয়োগ করা ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিনমার অং বলেন, ‘আমাদের জনগণ অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য যেকোনো মূল্য পরিশোধ করতে প্রস্তুত। জান্তার ওপর নিরাপত্তা পরিষদকে তিনি প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ চাপ প্রয়োগের অনুরোধ জানান।

গতকাল মিয়ানমারে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের ১৮ জন রাষ্ট্রদূত এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, আমরা তাদের সাহস এবং মর্যাদায় বিনীত হয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজার‌ল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত সাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, যারা স্বাধীন, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক মিয়ানমারের আকাঙ্ক্ষা করে আমারা তাদের সমর্থন করি। বিবৃতিতে মিয়ানমারের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি আটককৃত সকলকে মুক্তি দিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়।

শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে সামরিক সরকারের মুখপাত্র জ মিন তুন বলেন, বড় বড় দেশ, প্রতিবেশি দেশ এবং রাজনীতির শক্তিশালী মানুষদের প্রস্তাবে আমরা সম্মান জানাই। ক্ষমতাচ্যুত নেতা অং সান সু চির দলের সদস্যরা অগ্নিসংযোগ করছে উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেন, বৈদেশিক অর্থায়নে প্রতিবাদ সংগঠিত হচ্ছে। যদিও তিনি এই বক্তব্যের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ সরবরাহ করেননি। অভ্যুত্থানের পর থেকে সু চি এবং তার অনেক নেতা সেনাবাহিনী হেফাজতে রয়েছেন। জাও মিন তুন আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কিছু সদস্য সামরিক সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি, এটি একটি ভুয়া খবর। আমরা বিদেশি দেশগুলোকে সহযোগিতা করছি, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে একত্রে কাজ করছি।

মিয়ানমারের জাতিসংঘের বিশেষ রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিন শ্রেইনার বার্গনার মিয়ানমার পরিদর্শন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু জেনারেলরা এটা প্রত্যাখান করেছেন। গতকাল শুক্রবার তিনি মিয়ানমারের প্রতিবেশি দেশ থাইল্যান্ডে পৌঁছান। এক টুইটবার্তায় তিনি লেখেন, অত্যন্ত দুঃখজনক যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আমাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নয়। আমি সংলাপের বসতে প্রস্তুত। সহিংসতা কখনও শান্তিপূর্ণ স্থায়ী সমাধান দিতে পারে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here