খবর৭১ঃ
গত সপ্তাহে চীন ও ইরানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে আগামী ২৫ বছর দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বজায় থাকবে। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইরানের তেল কিনবে চীন। পাশাপাশি ইরানে কিছু বিনিয়োগও করবে চীন। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানে বিদেশি বিনিয়োগ অনেকটা বন্ধই রয়েছে।
সাউথ চায়না মরনিং পোস্ট এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তিটি ব্যাপক ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এই চুক্তির কারণে অন্যান্য দেশগুলো উদ্বিগ্ন; বিষেশ করে যেসব দেশের সঙে তেহরানের সম্পর্ক বৈরী।
তবে কিছু পর্যবেক্ষক মনে করছেন, কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন এবং নিষেধাজ্ঞার ফলে যার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এমন দেশের সঙ্গে বেইজিং নিজেকে বেঁধে রাখার পক্ষে যুক্তিযুক্ত কিনা?
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জাও লিজিয়ান সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, পরিকল্পনায় কোনো সুনির্দিষ্ট চুক্তি ও উদ্দেশ্য অর্ন্তভুক্ত ছিল না এবং কোনো তৃতীয় পক্ষকে লক্ষ্য করা হয়নি।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৫ বছরে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানী তেল সরবরাহের বিনিময়ে অর্থনীতির উন্নয়ন করবে চীন। এ জন্য দেশটি ইরানে ৪০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরানের সঙ্গে বেইজিংয়ের চুক্তিটি হচ্ছে দেশটির সুবিস্তৃত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ কর্মসূচিতে সর্বশেষ সংযোজন। বিশ্ব শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে এমন সব যোগাযোগ বাড়াতেই হবে বেইজিংকে।
ইরান চীনের চেয়ে আকারে ছোট হলেও দেশটির বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং প্রতিবাদী বৈদেশিক নীতির কারণে এর একটি স্বকীয়তা রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, নতুন চুক্তি ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্বের রসদ যোগাবে।
গত বছর এই সহযোগিতা চুক্তির খসড়া ফাঁস হওয়ার পর অনেক ইরানি নাগরিক চীনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। বেল্ট অ্যান্ড রোডসের চুক্তিগুলো সাধারণত চীনের স্বার্থই রক্ষা করে থাকে। এদের মধ্যে কিছু প্রাথমিকভাবে আকর্ষণীয় মনে হলেও শেষ পর্যন্ত ছোট ও গরিব দেশগুলোর জন্য সেগুলো গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যখন তারা দেখেছে যে চুক্তির উদ্দেশ্য থেকে ছিটকে পড়েছে তারা।
চীন বিশ্বাস করে, দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের অপূরণীয় পতন হবে। চীন নিজেকে একবিংশ শতাব্দী ও পরবর্তীর বিশ্বের উদীয়মান শক্তি হিসেবে মনে করে। আর এ পর্যায়ের শক্তিধর কোনো রাষ্ট্র আসলে মধ্যপ্রাচ্যকে বাদ দিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না।
ইরানের মতো স্বল্প মেয়াদে সুবিধা নেওয়ার চেয়ে কৌশলগত এই সহযোগিতা হয়তো উপসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদে চীনের জন্য বেশি গুরুত্ব বহন করে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এর মধ্যপ্রাচ্য সফর শুধু তেহরানে চুক্তি সইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র চায়না ডেইলি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, তিনি পঞ্চমুখী একটি পরিকল্পনার সূচনা করেছেন যার উদ্দেশ্যে ‘ফিলিস্তিন-ইসরাইল আলোচনা শুরু, ইরানের পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবন এবং এই এলাকায় একটি সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তুলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা।’
লোহিত সাগরে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি এরইমধ্যে তাদের প্রথম বৈদেশিক সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলেছে, যেটি পড়েছে জিবুতিতে। এটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত জাহাজ চলাচলে অঞ্চলের ওপর নজরদারি করে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর আফ্রিকা কমান্ড থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান।