শরীয়তপুর প্রতিনিধি: ২০ বছর পর শরীয়তপুরে আওয়ামীলীগ নেতা ও জজকোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান ও তার ভাই মনির মুন্সীর হত্যা মামলা রায় ঘোষণা করেছে আদালত। গত ২১ মার্চ ২০২১ এ রায়ে ৬ জনকে ফাঁসি, ৪ জনের যাবজ্জীবন এবং ৩ জনকে ২ বছর করে স্বশ্রম কারাদন্ড প্রদানের আদেশ করেছেন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইন। এ মামলায় ৪০ জন আসামীকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে।
এদিকে, অনেকেই ন্যায় বিচার পাওয়ায় বিচার বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। বেকোসুর খালাসপ্রাপ্তদের শুভাকাঙ্খী, আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা সন্তোষ প্রকাশ করে আনন্দ মিছিল ও মিস্টি বিতরণ করেছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য সৈয়দ হেমায়েত হোসেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য আক্তারুজ্জামান জুয়েল ওই মামলার রায়ে বেকোসুর খালাসপ্রাপ্ত হওয়ায় তাৎক্ষণিক ২১ মার্চ শরীয়তপুরের নড়িয়ায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও নড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি মামুন মোস্তফার নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল ও মিস্টি বিতরণ করা হয়। এসময় দলীয় বিভিন্ন স্তরের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও ওই দুই নেতার নিজ জন্মস্থান নড়িয়ার রাজনগর ইউনিয়ন, শরীয়তপুর, ঢাকাসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে সন্তোষ প্রকাশ করে মিস্টি বিতরণ করা হয়। এসময় বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও জজকোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান ও তার ভাই মনির মুন্সীর হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিনাদোষে ২০ বছর নানান নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, আওয়ামীলীগের নিবেদিত প্রাণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সোনালী অতীত সৈয়দ হেমায়েত হোসেন ও আক্তারুজ্জামান জুয়েল। তারা নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় গত ২১ মার্চ আদালত তাদের বেকোসুর খালাস দিয়েছে। এই রায়ে প্রমাণিত হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে বলেই দেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি।
অন্যদিকে, এ রায়ে সন্তুষ্ট নয় নিহতদের পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীরা। রায়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে ২১ মার্চ জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এ কর্মসূচিতে নিহতদের পরিবার ও স্বজনেরাও অংশ নেন। তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। আর ২২ মার্চ জেলায় অর্ধদিবস হরতাল পালন করে। পরে ২৩ মার্চ সাধারণ সভা ডেকে আইনজীবী সমিতি কর্মসূচি পালন করেছেন। এ সময় বিচারক শওকত হোসাইনের আদালত স্থায়ীভাবে বর্জনের ঘোষণাও দেন তারা। বিচারক শওকত আলোচিত ওই মামলার রায় দেন। এব্যাপারে নিহত সাবেক পিপি হাবিবুর রহমানের ছেলে জেলা জজ আদালতের এপিপি ও শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান জন বলেন, বাবা ও চাচা হত্যার বিচারের রায়ে আমি খুশি নই। যাদের বিরুদ্ধে বাবা ও চাচা হত্যার প্রমাণ রয়েছে তাদের অনেকেই খালাস পেয়েছেন। এটা দুঃখজনক।
এছাড়াও আসামীর পক্ষের অনেকেই ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে দাবি তাদের পরিবারের। এরমধ্যে ২২ মার্চ উক্ত মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত মজিবুর রহমান তালুকদারের পরিবারের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন করে মামলার রায় প্রত্যাহার ও ন্যায় বিচারের দাবি করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, মজিবর রহমান তালুকদারের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার রেবা। তিনি বলেন, আমার স্বামী একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। আওয়ামীলীগ নেতা ও জজকোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান ও তার ভাই মনির মুন্সীর হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বিনাদোষে ২০ বছর নানান নির্যাতনের শিকার হয়েছে আমার স্বামী মজিবর রহমান তালুকদার। এরপর গত ২১ মার্চ আদালত আমার স্বামীকে ফাঁসির দন্ড দিয়েছে। এতে আমার স্বামীকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাই আমি ও আমার পরিবার ন্যায় বিচার চাই। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মরহুম শহর আলী তালুকদারের স্ত্রী ও মজিবুর তালুকদারের মা ১০২ বছরের বৃদ্ধা মেহেরজান বিবি, মজিবুর তালুকদারের মেয়ে লামিয়া আক্তার, মারিয়া আক্তার, বড়ভাবী শারমিন আক্তার, ভাতিজা শাওন তালুকদার, শোভন তালুকদার প্রমূখ। গৃহিনী রাবেয়া আক্তার রেবা আরও বলেন, আমার শাশুরী মেহেরজান বিবি ১০২ বছরের বৃদ্ধা, বড় ভাসুর হাশেম তালুকদার ক্যান্সারের রোগী, আমার ২ কন্যা সন্তান। আমার স্বামীই পরিবারের একমাত্র মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে ছাড়া আমরা এখন অসহায়। আমরা সামাজিক ভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছি ও মানবেতর জীবনযাপন করছি। তাই উক্ত বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায় বিচার প্রার্থণা করছি।