খবর ৭১: পরনে ওয়েস্টার্ন পোশাক। ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক। আকর্ষণীয় মেকাপ। সেজেগুজে বিকাল এলেই লালমাটিয়ার বাসা থেকে বের হতেন গাড়ি নিয়ে। ফিরতেন গভীর রাতে, কখনো ভোরে। যাওয়ার সময়ে স্বাভাবিক থাকলেও ফেরার সময় অবস্থা ভিন্ন। গভীর রাতে গাড়ি থেকে নেমে মৃদু দুলতে দুলতে হাঁটেন তিনি। চুলগুলো তখন এলোমেলো।
ঠোঁটের লিপস্টিক আর নেই। চোখে-মুখে তীব্র নেশা। নেশায় বুঁদ হয়েই বাসায় ফিরতেন তিনি। গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি দিন শেষে রাত ৩টার দিকে সেভাবেই অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণাকে দেখতে পান তার স্বামী কামরুল ইসলাম জুয়েল। ফিল্ম, নাটকের কোনো কাজ নেই। তবুও দিনভর বাসায় ঘুমিয়ে বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাইরে থাকতে হয় তাকে। এ নিয়ে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হয় না স্বর্ণাকে। কারণ তার আয়েই চলে মা, ভাই, ভাবীসহ কয়েক সদস্যের সংসার, বিলাসী জীবনযাপন। গুলশানের দু’টি পাঁচতারকা হোটেল, পান্থপথের পান্থকুঞ্জ সংলগ্ন একটি তারকা হোটেল, নিকেতনের একটি ফ্ল্যাট ও সেগুনবাগিচার একটি বাসায় ছিল তার অবাধ যাতায়াত।
রাতভর বাইরে থেকে অর্থ উপার্জন ছাড়াও নানা ধরনের প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েছিলেন এই অভিনেত্রী। ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম জুয়েল ছাড়াও প্রতারণা করেছেন আরো অনেকের সঙ্গে। ২০১৯ সালে ২ লাখ টাকার চেক ডিজঅনারের একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রোমানা ইসলাম স্বর্ণা। অবাধে প্রতারণা ও বেপরোয়া জীবনযাপন করলেও কাউকে তোয়াক্কা করতেন না তিনি।
কারণ হিসেবে জানা গেছে, স্বর্ণার রয়েছে হাইপ্রোফাইল কানেকশন। প্রভাবশালী নেতা থেকে শুরু করে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। জুয়েলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে বিভিন্ন কৌশলে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেন এই অভিনেত্রী। টাকা চাইতে গেলেই দেই, দিচ্ছি করেন। একপর্যায়ে ব্ল্যাকমেইল ও বিয়ের ফাঁদ পাতেন স্বর্ণা।
জুয়েল দাবি করেন, বাসায় ডেকে নগ্ন ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করার উদ্দেশ্য ওই টাকা ফেরত না দেয়া। বরং বিয়ের নামে তাৎক্ষণিক দেনমোহর বাবদ ১০ লাখ টাকা নেন স্বর্ণা। এরপর নানা কৌশলে বারবার মোটা অঙ্কের টাকা নেন এই অভিনেত্রী। সব মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
২০১৯ সালের ২০শে মার্চ স্বর্ণাকে বিয়ে করার পর কয়েকদিন একসঙ্গে ছিলেন। দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর যখনই কল দেন ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা বলেন না স্বর্ণা। কখনো ঘুমে। কখনো কাজে ব্যস্ত বলে জানান। প্রায় সময় জুয়েলের কল রিসিভই করেন না তিনি।
ওই সময়ে খোঁজ নিয়ে জুয়েল জানতে পারেন, রোমানা ইসলাম স্বর্ণা নিজের অবস্থানের সঠিক তথ্য দেন না তাকে। প্রায় রাতই বাসার বাইরে কাটে তার। এ নিয়ে বাকবিতন্ডা হয় দু’জনের। গত ১২ই ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরেন জুয়েল। ওই সময়ে ফোনে কথা হলে অকথ্য ভাষায় তাকে গালমন্দ করেন। এ রকম একটি ভয়েস রেকর্ডে শোনা গেছে, স্বর্ণা তার জিহ্বা টেনে ছেঁড়া ও হাত পা কেটে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। গালি দিচ্ছেন অকথ্য ভাষায়।
তারপর গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি রাতে স্বর্ণাকে বাসায় না পেয়ে পুলিশের সহযোগিতা নেন জুয়েল। পুলিশের সামনেই মাদকে বুঁদ হয়ে থাকা স্বর্ণা জানান, জুয়েলকে তিনি ডিভোর্স দিয়েছেন। এমনকি একটি জিডি করেছেন থানায়। যদিও ডিভোর্সের কোনো নোটিশ পাওয়া যায়নি সিটি করপোরেশনসহ কোথাও।
জুয়েল অভিযোগ করেন, বাস্তব জীবনে অভিনয় ও ব্ল্যাকমেইল করে স্বর্ণা তার সামাজিক মর্যাদা নষ্ট করেছেন। আত্মসাৎ করেছেন বিপুল অর্থ। এই টাকা ফেরত চান এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।
মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক দুলাল হোসেন বলেন, স্বর্ণা গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অনেক তথ্য অনেকে দিচ্ছেন। কিন্তু সামাজিক কারণে লিখিত অভিযোগ দিতে চান না তারা। কামরুলের কাছ থেকে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় স্বর্ণাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে স্বর্ণার ৫ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত একদিনের জেলে গেটে জিজ্ঞাসবাদের অনুমতি দিয়েছিলেন। তদন্তের স্বার্থে আবার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ১১ই মার্চ সন্ধ্যায় লালমাটিয়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় স্বর্ণা ও তার ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে আন্নাফি এবং স্বর্ণার মা আশরাফী আক্তার শেইলীকে। তার আগে প্রতারণা, ব্লাকমেইল ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ী মাদারীপুরের রাজৈরের কামরুল হাসান জুয়েল। গ্রেপ্তার টিভি অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণা ফরিদপুর জেলা সদরের দক্ষিণ টেপাখোলার এটিএম নজরুল ইসলামের মেয়ে।