খবর৭১ঃ নিউজিল্যান্ডের ডানেডিনে কিউই পেসারদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে উড়ে গেছে বাংলাদেশ। দেড়শ রানও করতে পারল না টাইগাররা।
৪৯.৫ ওভারে মাত্র ১৩১ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
আর ১৩২ রানের মামুলি টার্গেট হেসেখেলেই পার করে দিয়েছে কিউই ব্যাটসম্যানরা। তাও কিনা ২২.২ ওভারেই।
এ যেন পাড়ার ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলল নিউজিল্যান্ড। অথচ ম্যাচ শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও কোচ ডমিঙ্গো বলেছিলেন, চমৎকার প্রস্তুতি সেরেছেন এবার। ক্রিকেটাররাও নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। ৩ স্পেশালিস্ট পেসারকে দিয়ে নিউজিল্যান্ডকে চমকে দেবেন তারা।
কিন্তু মাঠে দেখা গেল একেবারে উল্টো চিত্র। ব্যাটসম্যানদের ভরাডুবির পর বাংলাদেশের সাফল্য শুধু ওপেনার গাপটিল ও অভিষিক্ত ডেভন কনওয়ের উইকেট।
টি-টোয়েন্টি মেজাজে বাংলাদেশি বোলারদের তুলোধোনা করে যাচ্ছিলেন গাপটিল। মাত্র ১৮ বলে ৩৯ রান করেছেন। তার টর্নেডো ইনিংস থামিয়ে দেন পেসার তাসকিন।
কিন্তু এ উইকেটপ্রাপ্তির উল্লাস না করলেও চলে। বাকি কাজটা সারতে ৯ জনের দরকার ছিল না নিউজিল্যান্ডের।
একটু দেখেশুনে খেলে ৫৩ বলে ৪৯ রান করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন হেনরি নিকোলস। অবশ্য অপরপ্রান্তে অভিষিক্ত ডেভন কনওয়েকে ২৭ রানে ফেরান হাসান মাহমুদ।
ফলে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ৮ উইকেটের বিশাল জয় পেল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।
মূলত নিউজিল্যান্ডের ডানেডিনে কিউই পেসারদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে উড়ে গেছে বাংলাদেশ।
পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী ছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট। ৮.৪ ওভার বল করে মাত্র ২৭ রানের খরচায় ৪ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
শুরুর ধাক্কাটিও তার। ছক্কা হাঁকিয়ে ইনিংস শুরু করা বার্থডে বয় তামিম ইকবালকে ফেরান তিনি। এরপর আরেক ওপেনার সৌম্যকে রানের খাতাই খুলতে দেননি।
একটু বিরতি দিয়ে শেষদিকে তাসকিন ও হাসান মাহমুদের উইকেটটি নিয়ে নেন তিনি।
দুটি উইকেট নিয়েছেন পেসার জেমস নিশাম। মাহমুদউল্লাহর উইকেটটি শিকার করেছেন আরেক পেসার ম্যাট হেনরি।
এছাড়া স্পিনার মিচেল সান্টানার ২ উইকেট পেয়েছেন।
মূলত বোল্টের পেসে তামিম ও সৌম্যকে হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দুর্দান্ত শুরুর পরই বড় ধাক্কা লাগে বাংলাদেশ শিবিরে।
ছক্কা মেরে রানের খাতা খুলেন ওপেনার তামিম ইকবাল।
যদিও ম্যাচের প্রথম বলটি বুঝেই উঠতে পারেননি তিনি। সুইংয়ের সঙ্গে সিমের মিশেলে আউটসুইং করা ইয়র্করের মোকাবিলায় অল্পের জন্য বেঁচে যান তামিম।
এক বল পরেই ছক্কা হাঁকান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
ট্রেন্ট বোল্টের করা অফস্ট্যাম্পের বাইরে শর্ট লেন্থের বলকে আপার কাটে থার্ড ম্যান দিয়ে ছক্কা হাঁকান তামিম।
পরের ওভারে ম্যাট হেনরিকে দারুণ এক ফ্লিকে বাউন্ডারি হাঁকান।
এমন হাত খুলে মেরেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি ‘বার্থডে বয়’ তামিম।
জন্মদিনটি রাঙিয়ে রাখতে পারলেন না তিনি। ১৫ বল খেলে মাত্র ১৩ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন।
বোল্টের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বল সুইং করে ভেতরে ঢুকলে এলবিডব্লিউ হন তামিম।
একই ওভারের চতুর্থ বল উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন সৌম্য। কিন্তু ব্যাটে-বলে টাইমিং মেলেনি।
ফলে কভারে দাঁড়িয়ে থাকা অভিষিক্ত ডেভন কনওয়ের কাছে ক্যাচ চলে গেলে সহজেই লুফে নেন তিনি।
রানের খাতাই খুলতে পারেননি সৌম্য।
দলীয় ২০ রানের মাথায় ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
এমন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম। ৪১ রান অবধি নিয়ে যান দলকে। ভালোই খেলে যাচ্ছিলেন জীবন পাওয়া ওপেনার লিটন দাস।
কিন্তু ১৩তম ওভারে গিয়ে মনযোগ হারান। নাশিমের বলে স্ট্রেইট মিড-ওনে বোল্টের হাতে ক্যাচে পরিণত হন।
আউট হওয়ার আগে ৩৫ বল খেলে ১৯ রান করতে পারেন লিটন দাস।
লিটনের আউটের পর মুশফিককে সঙ্গ দিতে নামেন মোহাম্মদ মিঠুন।
দূর্ভাগ্যজনক রানআউট হয়ে সমাপ্তি ঘটে তার ৯ রানের ইনিংসের।
তার আউটের পর একাই দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন মি. ডিপেন্ডেবল মুশফিক।
কিন্তু তিনিও এ ভার বেশিক্ষণ সইতে পারলেন না।
কিউই পেস বোলিং অলরাউন্ডার জেমস নিশামের বলে আউট হয়ে গেলেন ২৩ রানে।
ইনিংসের ২২তম ওভারের প্রথম বলে নিশামের করা বাউন্সারে কাট করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ধরা পড়েছেন মুশফিক।
তার আউটের পর তাসের ঘরের মতো উইকেট পড়তে থাকে বাংলাদেশের।
দ্রুতই আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মিরাজ ও টেলএন্ডারের তাসকিন ও হাসান।
৯.১ ওভার বাকি থাকতে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।
কিউই পেসারদের তোপে ১৩১ রানের বেশি করতে পারেনি তামিম বাহিনী।