খবর৭১ঃ মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেড় মাস পরে শুরু হওয়া বইমেলায় সশরীরে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়ালি অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার মনটি বইমেলায় পড়ে রয়েছে। সরকারি কিংবা বিরোধী দল যেখানে থাকুন সবসময় একদিনের জন্য হলেও বইমেলায় গিয়েছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের। গণভবন থেবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। মেলা উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘সরকারে থাকি আর বিরোধীদলে থাকি একদিনের জন্য হলেও বইমেলায় যাই। এখন করোনার কারণে যেতে পারছি না। তবে আমার মনটা পড়ে আছে সেখানে।’
মেলায় গিয়ে সরাসরি উদ্বোধন না করার সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন কোথাও যাই, বিভিন্ন কারণে হাজারখানেক লোক সেখানে যায়। কাজেই রোগটা যেন সংক্রমিত না হয়। তা ছাড়া ছাত্র বা আমাদের সংগঠনের অনেকেই এখানে উপস্থিত হয়ে যান। সে ভিড় বা সমাবেশটা যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে ও মানুষ যাতে সংক্রমিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমি সেখানে উপস্থিত থাকতে পারলাম না।’
মেলায় যারা যাবেন সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মার্চ মাসে আমাদের এই অনুষ্ঠানটা হচ্ছে; যদিও সব সময় ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমেই করা হয়। তবে পয়লা ফেব্রুয়ারি এবার আমরা শুরু করতে পারিনি। করোনাভাইরাসের প্রদুর্ভাবের কারণেই আমাদের এই সময় নিতে হলো। কারণ যখন টিকাদান শুরু করব, টিকাদান শুরু করার পর আমরা মনে করলাম যে একটু মনে হয় সময় নিয়ে দেখা দরকার কী অবস্থা হয়। যদিও এই মার্চ মাসেই করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। আবার সে প্রাদুর্ভাব একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য সবাইকে আমি বলব, আপনারা একটু সাবধানে থাকবেন। মার্চ মাস কিন্তু আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। আর এই মাসেই বইমেলার অনুষ্ঠান।’
নতুন প্রজন্মকে বই পড়ায় আগ্রহী করে তোলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছোটদের বইয়ের প্রতি ঝোঁক বাড়ানো দরকার। আমাদের সময় বাচ্চাদের বই পড়ে শোনানো হতো। এখনো আমরা তা করি। সব সময় ঘরে একটা ছোট লাইব্রেরি করে রাখি। বইয়ের প্রতি ঝোঁক বাড়াতে হবে। পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আমাদের বক্তৃতা বিবৃতিতে মানুষের কাছে যত দ্রুত পৌঁছা যায়, সাহিত্যে আরও আগে পৌঁছা যায়। সাহিত্যের মাধ্যমে ইতিহাস, ভাষা-সংস্কৃতিও জানা যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তো মোবাইল ডিভাইসেও পড়ার সুযোগ আছে। তবে বই হাতে নিয়ে বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার আনন্দই আলাদা। বইয়ের আবেদন মুছে যাবে না। সেজন্য প্রকাশকদের ধন্যবাদ, মহামারির সময়েও অনেক কষ্ট করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী অনুবাদ সাহিত্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, নিজের মায়ের ভাষাকে জানা যেমন দরকার তেমনি অন্য ভাষা জানাটাও দরকার সে জন্য অনুবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য বাংলা একাডেমিকে সবময়ই আমি অনুরোধ করেছি-অন্যান্য দেশের সাহিত্য যেন আমরা জানতে পারি। কারণ, সহিত্যের মধ্যদিয়েই মানুষের জীবনচর্চা জানা যায়, সংস্কৃতি ও ইতিহাস জানা যায়।
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, সচিব বদরুল আরেফিন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ গ্রন্থের ইংরেজী ভার্ষণ (নিউ চায়না ১৯৫২)-এর মোড়ক উন্মোচন করেন।