খবর৭১ঃ রোজার মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এর পেছনে ১১টি কারণ খুঁজে পেয়েছে সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা।
কারণগুলো হচ্ছে-প্রথাগত সরবরাহ প্রক্রিয়া, অতিরিক্ত মজুদের মাধ্যমে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং, রমজানে পণ্যের বাড়তি চাহিদা, পরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি, যানজট ও অতিরিক্ত পরিবহণ ব্যয়, অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি, স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতা, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর উচ্চ সুদের হার, ঋণপ্রাপ্তিতে জটিলতা এবং ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় বেড়ে যাওয়া।
সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দাম বৃদ্ধির এসব কারণ উদ্ঘাটন করেছে গোয়েন্দারা।
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারের কাছে ১০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সংস্থাটির আশঙ্কা, রমজান ঘিরে চালের বাজারে আরেক দফায় অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে।
সূত্র মতে, রমজান সামনে রেখে অসাধু সিন্ডিকেট সদস্যরা চাল, ছোলা, ডাল. সবজি, মশলা, ভোজ্যতেল, খেজুর, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ, মাছ-মাংস এবং গুঁড়া দুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত দুমাসে ধাপে ধাপে বাড়িয়েছে। এই দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। দুমাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি ছোলা সর্বোচ্চ ১০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুর ১৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজি চিনি ১০ টাকা, মুগডাল ১০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস দুমাসের ব্যবধানে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫ টাকা বেড়েছে। গুঁড়া দুধ কোম্পানিভেদে কেজিতে ২০-৪০ টাকা বেড়েছে। খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ৯ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা সংস্থার সুপারিশগুলো হচ্ছে-টিসিবিকে অধিকতর কার্যকরের পাশাপাশি মহানগরের বাইরে জেলা ও থাকা পর্যায়ে টিসিবির কার্যক্রম বেগবান করতে হবে।
পণ্যের আমদানি ও বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানিকারকদের ভোগ্যপণ্যের এলসি মার্জিন ও আমদানি শুল্ক কমাতে সহায়তা প্রদানে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনাসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আরও কার্যকরী ভূমিকা নিতে হবে।
আমদানিনির্ভর সব নিত্যপণ্যের মজুদ মনিটরিংয়ের আওতায় এনে সরকারিভাবে মজুদ বাড়াতে হবে। নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি মজুদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
দেশের সব বাজারে নিয়মিত মূল্যতালিকা হালনাগাদকরণ ও প্রদর্শন কার্যক্রম নিশ্চিতের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অসৎ ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পণ্য সংকটের অজুহাতে আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা যেন পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
গোয়েন্দা সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, পণ্যের আমদানি ও উৎপাদনস্থল থেকে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা হয়ে ভোক্তার হাতে পৌঁছা পর্যন্ত মূল্য পার্থক্য কমিয়ে আনতে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে।
মজুদদারি ও কালোবাজারি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি গুজবের মাধ্যমে কেউ যেন বাজার পরিস্থিত অস্থিতিশীল করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
সরকার যেসব পণ্যের মূল্যতালিকা নির্ধারণ করেছে সেসব পণ্যের দাম যেন বিক্রেতারা নিজেদের ইচ্ছামতো বাড়াতে না পারে সে বিষয়টি কড়া নজরদারিতে রাখতে হবে। পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, রমজানে নিত্যপণ্যের চাহিদাকে পুঁজি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী মজুদ করে বা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দিয়ে বাজারকে অধিকতর অস্থিতিশীল করে তোলে। তাই এ বিষয়ে আগে থেকেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।