খবর৭১ঃ বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটির বর্ষপূর্তি হচ্ছে কাল। গত বছর ১৬ মার্চ সংবাদ সম্মেলন ডেকে দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে এখনও চলছে সেই ছুটি।
মাঝে সংক্রমণ কমে আসায় ৩০ মার্চ থেকে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খুলে দেওয়ার ঘোষণা আসে। কিন্তু ইতোমধ্যে সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। রোববার বিগত আড়াই মাসের মধ্যে সংক্রমণের রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ঘোষিত তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
অভিভাবকরা বলছেন, প্রায় সাড়ে ১২ মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সচল হওয়ার ঘোষণায় তাদের সন্তানদের মধ্যে স্বস্তি দেখা দিয়েছিল। অনেকেই আনন্দের সঙ্গে অপেক্ষা করছিল যে, কবে তারা ক্লাসরুমে ফিরবে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ও পাশাপাশি নতুন বা পরিবর্তিত রূপের আবির্ভাবে তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। শহরাঞ্চলে বেশিরভাগ অভিভাবককে সন্তান নিয়ে গণপরিবহন বা রিকশায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতে হয়।
যুবকদের আক্রান্তের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। শিশুদের হার কম হলেও তারা ভাইরাস-বাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। এ অবস্থায় তারা সন্তানদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। শুক্রবার সংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি আমরা প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করছি। আমাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী এবং অভিভাবকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেব।’
তিনি বলেন, ‘…যদি এ ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকে তাহলে পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এবং জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে সরকার পুনর্বিবেচনা করবে যে, খোলার তারিখটি ৩০ মার্চই থাকবে না পরিবর্তন করা হবে। যদি পরিবর্তন হয় তাহলে সময়মতো জানিয়ে দেয়া হবে।’
এদিকে শঙ্কা এবং সংশয়ের মধ্যেই ঘোষিত তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার প্রস্তুতি অব্যাহত আছে। এর অংশ হিসাবে শিক্ষক এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টিকা দেওয়ার কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যারা ৪০ বছরের কম বয়সি তাদের টিকাসংক্রান্তসংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ও অ্যাপসে যুক্ত করতে বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র (নম্বর) সংগ্রহের কাজ চলছে। আজকের মধ্যে তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানোর তারিখ নির্ধারিত আছে।
জানা গেছে, প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ২০ মার্চের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-কর্মচারীকে টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের যেসব প্রতিষ্ঠান আর্থিক সংকটে আছে সেগুলোকে সহায়তার চিন্তা করছে মাউশি।
মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান প্রস্তুতি নিতে আর্থিক সংকটে আছে। তাদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি।
শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৮ বছর থেকে এর বেশি বয়সি শিক্ষক ও অশিক্ষক জনবল এবং শিক্ষার্থী আছে অন্তত ৫২ লাখ ১০ হাজার। অপরদিকে এখন পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০ লাখের মতো মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছে ৫ লাখ ৬৭ হাজার শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী। অনাবাসিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ পরিকল্পনার বাইরে আছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ লাখ ৫৪ হাজার শিক্ষকের টিকাদান কার্যক্রম চলছে।
রোববার পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষকের টিকাদান কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের আওতায় অর্ধ লাখ কেজি স্কুল আছে। সেখানকার শিক্ষকরা টিকাদানের বিশেষ অগ্রাধিকার সুবিধার মধ্যে এখনও আসেনি বলে জানা গেছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৭ লাখ শিক্ষার্থী আছে। তাদের মধ্যে অন্তত ২৫ লাখেরই বয়স ১৮ বছরের উপরে। এরা সবাই টিকার বাইরে থাকছে।
এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩ লাখ শিক্ষার্থী এবং ৪০ বছরের নিচে থাকা শিক্ষক ও অন্য জনবল, একই ধরনের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্মচারীরাও থাকছে টিকার বাইরে। সেই হিসাবে নতুন করে করোনার ঊর্ধ্বমুখিতার কারণে প্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অভিভাবকরা আতঙ্কে আছেন।