ডিএনসিসি ও বিগ-আরএস এর মধ্যে সহযোগিতা কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন মেয়র আতিক

0
374

খবর ৭১: গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (BIGRS/বিগ-আরএস) এর মধ্যে সহযোগিতা কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। গুলশানস্থ নগর ভবন থেকে অনলাইনে ডিএনসিসি মেয়র এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে ঢাকা মহানগরীতে সড়ক সংঘর্ষ (Road crash) ও মৃত্যু কমিয়ে আনা। এ লক্ষ্যে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সংস্থা দুটির মধ্যে সহযোগিতা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা গতকাল রাতে এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে।

সারা বিশ্বে সড়ক সংঘর্ষের অন্যতম প্রধান কারণ গাড়ির গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ। এ বিষয়ে সহযোগিতা কার্যক্রমে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। এছাড়া ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস-এর ‘পার্টনারশিপ ফর হেলদি সিটিজ’ এর আওতায় সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রমের সহযোগী হিসেবেও ডিএনসিসি কাজ অব্যাহত রাখবে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলাম ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস-এর প্রতিনিধি কেলি লার্সন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট (এআরআই)-এর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আতিকুল ইসলাম বলেন, সড়ক নিরাপত্তার বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই এয়ারপোর্ট রোডের কুর্মিটোলায় একটি বেপরোয়া গতির বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় ফুঁসে ওঠা শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। শিক্ষার্থীরা সারা দেশের সড়কগুলো দখলে নিয়ে সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে টানা নয় দিন আন্দোলন চালিয়েছিলো।

মেয়র আরো বলেন, এই সহযোগিতা কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো, ট্রাফিক আইন প্রয়োগ জোরদার করা, সড়কের নকশা উন্নত করা, অবকাঠামো নির্মাণ, সড়কে হতাহতের ঘটনার নজরদারি ব্যবস্থা, এবং জনসচেতনতা বাড়াতে ও আচরণ পরিবর্তনে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো।বৃহত্তর সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীতে সড়ক সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য তিনি ডিটিসিএ, ডিএমপি, বিআরটিএ, বুয়েটের এআরআই-এর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমি আশা করি আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী সড়ক নিরাপত্তা কৌশল ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা আরো বাসযোগ্য, নিরাপদ ও সহিষ্ণু ঢাকা গড়ে তুলতে পারবো”।

মেয়র আরও বলেন, ঢাকা শহরের সড়ক নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে না। কেবলমাত্র পরীক্ষিত ও প্রমাণিত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও বিগ-আরএস কার্যক্রমের কারিগরি প্রধান তারিক বিন ইউসুফ ঢাকা উত্তর সিটির সার্বিক সড়ক নিরাপত্তার বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন।তিনি জানান, সড়কে সংঘর্ষ বিশ্বে মৃত্যুর ৮ম প্রধান মৃত্যুর কারণ এবং ৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। বাংলাদেশে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর ৪র্থ প্রধান কারণ এটি। এবং সংঘর্ষের শিকার মানুষের শতকরা ৬৭ ভাগের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর তথ্যমতে, ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৫০০টির বেশি সংঘর্ষে ৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ৭ হাজার মানুষ আহত হয়েছে।

বিগ-আরএস কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ডিএনসিসি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও নগর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে গঠিত একটি নেটওয়ার্কে অংশ নিয়েছে। যেখানে বৈশ্বিক পর্যায়ের সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণ, নিরাপদ সড়ক এবং নিরাপদ চলাচল, পুলিশের আইন প্রয়োগ এবং গণমাধ্যম ও যোগাযোগে সহায়তা প্রদান করা হবে।

সড়কে জীবন রক্ষায় তথ্য-উপাত্ত নির্ভর ও পরীক্ষিত সমাধান বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাগুলো ডিএনসিসিকে কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করবে।

সহযোগী সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস, গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপ (জিআরএসপি), ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইন্সটিটিউট (ডব্লিউআরআই), জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ এবং দেশীয় পর্যায়ের সংস্থা (জিএইচএআই/বিশ্ব ব্যাংক/ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা)।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস-এর প্রতিনিধি কেলি লার্সন বলেন, “সড়ক সংঘর্ষ ও হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনতে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি শীর্ষক আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে ঢাকা মহানগরীকে স্বাগত জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত। বিশ্বে প্রতি বছর ১৩ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ সড়কে নিহত হয়। পরীক্ষিত ও উপাত্ত-নির্ভর কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই মৃত্যু সংখ্যার প্রায় পুরোটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

‘পার্টনারশিপ ফর হেলদি সিটিজ’ এর পরবর্তী ধাপের অংশ হিসেবে সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে ডিএনসিসি অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে। পরিপূরক হিসেবে এসকল কর্মকাণ্ড বিগ-আরএস কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত জীবনরক্ষাকারী কার্যক্রমকে আরো জোরদার করবে।

বিগ-আরএস কার্যক্রমের তৃতীয় ধাপে (২০২০-২০২২) যেসব দেশের শহর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ইথিওপিয়া, ভারত, উগান্ডা ও ভিয়েতনাম। বর্তমান নগরগুলোর মধ্যে আক্রা ও কুমাসি (ঘানা), আদ্দিস আবাবা (ইথিওপিয়া), বোগোতা (কলম্বিয়া), ঢাকা (বাংলাদেশ), গুয়াদালাজারা (মেক্সিকো), হ্যানয় ও হো চি মিন সিটি (ভিয়েতনাম), কাম্পালা (উগান্ডা), মুম্বাই, বেঙ্গালুরু ও নয়া দিল্লী (ভারত) এবং সাও পাওলো, সালভাদর ও রেসিফ (ব্রাজিল)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here