খবর৭১ঃ
গত কয়েক দিন ধরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার পেছনে স্বাস্থ্যবিধি না মানা, সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন ও পর্যটন স্পটগুলোতে দেদারছে ঘুরতে যাওয়া দায়ী বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, ‘ইদানীং আমাদের সংক্রমণের হার বেড়েছে। মানুষ যেভাবে কক্সবাজার যাচ্ছে, সিলেটে যাচ্ছে, যেভাবে সামাজিক অনুষ্ঠান হচ্ছে, মাস্ক পরার বালাই নাই, সামাজিক দূরত্বের বালাই নাই— সংক্রমণ তো বাড়বেই। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে আগের তুলনায়।’
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর একটি হোটেলে বছরব্যাপী যক্ষ্মা সচেতনতা কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৯১২ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় গত একদিনে শনাক্তের হার ৫.১৪ শতাংশ। যা গত ৫৬ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ১২ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার তার আগের নয় মাসের মধ্যে কমে ৫ শতাংশ হয়েছিল। এর আগে ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল সর্বনিম্ন শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর পর শনাক্তের হার বেড়েছে। ৫ শতাংশে নামেনি।
এ পরিস্থিতি সামনে রেখে সতকর্তা উচ্চারণ করে জাহিদ মালেক আরও বলেন, ‘করোনা কিন্তু চলে যায়নি। আমাদের কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। এখন কিন্তু আমাদের আবারও সজাগ হতে হবে। করোনা যখন যাবে, তখন আমরা সবাই জানবো। শুধু বাংলাদেশ না, গোটা পৃথিবী থেকে দূর হলে বাংলাদেশ নিরাপদ হবে।’
এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েই করোনামুক্ত হয়ে গেছেন জনগণকে এমনটা না ভাবার আহ্বান জানান মন্ত্রী। বলেন, এক ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েই ভাবা উচিত না যে, করোনামুক্ত। ভ্যাকসিন নিলেই করোনামুক্ত হবে না। ভ্যাকসিন একটা সুরক্ষা। দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর সময় লাগবে সুরক্ষা তৈরি হতে। দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার আগে করোনা থেকে সুরক্ষা তৈরি হবে না।’
‘করোনা দেখিয়ে দিলো স্বাস্থ্য খাতে মনোযোগী না-হলে পৃথিবীর কোনো উন্নয়ন- অগ্রগতি সম্ভব না। সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। ১০ বছরের যতটুকু এগিয়ে যাওয়া হয়েছিল, আবারও এক করোনা ১০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পুরো পৃথিবীর অঙ্কে সময় লাগবে।’
পৃথিবীর অনেক দেশ ঋণাত্মক সুচকে চলে গেছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব দেশ পেয়েছিল বলে বাংলাদেশ ভালো আছে। অর্থনৈতিকভাবে বেশ ভালো আছে। ধনাত্মক সুচকে আছে দেশ।
তিনি আরও বলেন, আমরা জানি, স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়েছে করোনার কারণে। আমরা সবজায়গায় সেবা সেভাবে দিতে পারিনি করোনার কারণে। কিন্তু এখন আমরা আবারও বাউন্সব্যাক করেছি। সবক্ষেত্রে বাউন্সব্যাক করেছি।’
যক্ষ্মায় আমাদের ভালো সাফল্য রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রতি লাখে ৫৪ জন মারা যেত যক্ষ্মায়, এখন সেটা নেমে এসেছে ২৪ জনে। আমাদের এখনও যক্ষ্মা রোগী আছে তিন লাখ। প্রত্যেক বছর দেড় লাখ নতুন রোগী যুক্ত হচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবায় যেহেতু অনেক কাজ হচ্ছে সরকারি বেসরকারিভাবে, সেই কারণে আমাদের সুস্থতার হার বেশ ভালো আছে। যক্ষ্মা শনাক্তের হার আমাদের বাড়াতে হবে। তবেই যক্ষ্মা থেকে দেশ মুক্তি লাভ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যা ছিল, আমরা স্বীকার করি। কিন্তু আমাদের মূল বিষয় হচ্ছে— আমরা সমস্যাকে ফেলে রাখিনি, দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করেছি এবং সফল হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী সবসময় গাইড করেছেন, অর্থের জোগান দিয়েছেন। আমরা ভ্যাকসিন দিচ্ছি এখন, আমাদের আশেপাশে অনেক দেশ আছে তারা এখনও ভ্যাকসিন পায়নি। সব ঠিক থাকলে আমাদের প্রোগ্রাম যেভাবে করা আছে, আগামীতে ইনশাল্লাহ সব ঠিকভাবে সম্পন্ন হবে।’