খবর ৭১: বিগত কয়েক সপ্তাহে অভ্যুত্থান বিরোধী আন্দোলনের ব্যাপক সম্প্রচার চালিয়েছে এ পাঁচটি সংবাদমাধ্যম। দেশটিতে বিগত কয়েক সপ্তাহে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। আন্দোলনকারীদের দমনে কঠোর পন্থা অবলম্বন করছে পুলিশ ও সামরিক জান্তা। এখন পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। সেনাবাহিনী ‘শুট টু কিল’ নীতি হাতে নিয়েছে বলে সতর্ক করেছেন অধিকারবাদী কর্মীরা।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান বিরোধী আন্দোলন প্রচারের কারণে পাঁচটি সংবাদমাধ্যমের লাইসেন্স বাতিল করেছে সামরিক জান্তা।
মিজিমা, ডেমোক্রেটিক ভয়েস অব বার্মা (ডিভিবি), খিত থিত মিডিয়া, মিয়ানমার নাও এবং সেভেনডে নিউজ- এই পাঁচটি সংবাদমাধ্যম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়ে বলে জানা গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এমআরটিভি’র এক ঘোষণায়। ঘোষণায় বলা হয়, কোনো ধরনের মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের কোনো কিছু সম্প্রচারের, লেখার বা কোনো তথ্য জানানোর অনুমতি নেই আর।
সোমবার সন্ধ্যায় নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসার আগে ‘মিয়ানমার নাও’ এর সদর দপ্তরে অভিযান চালায় সেনা সদস্যরা। এ সংবাদমাধ্যমটির কম্পিউটার, নিউজরুম ডাটা সার্ভার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি জব্দ করেছে সেনাবাহিনী।
সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত দেশটির ১ হাজার ৮০০ জনকে আটক করেছে, আটককৃতদের মধ্যে সাংবাদিকও আছেন বেশ কয়েকজন।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া এক সংবাদমাধ্যম ডিভিবি’র এক সাংবাদিক তার বাড়ির বারান্দা থেকে একটি ভিডিও ধারণ করেন, ভিডিওটিতে দেখা যায় নিরাপত্তা বাহিনী তার বাড়ি ঘিরে ফেলেছে এবং চিৎকার করে তাকে নিচে নামার নির্দেশ দিচ্ছে। ভিডিওটির ব্যাকগ্রাউন্ডে গুলির শব্দও ভেসে আসছিল। কুয়াং মায়াত হ্লাইং নামের এই সাংবাদিক চিৎকার করে তার প্রতিবেশীদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছিলেন। তাকে শেষ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ডিভিবি। আন্দোলন সম্প্রচারের জন্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ফটো সাংবাদিক থেইন জো-সহ মোট ছয়জন সাংবাদিককে পাবলিক অর্ডার আইন ভঙ্গের মামলা দেওয়া হয়েছে।
ডিভিবি জানিয়েছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল অপ্রত্যাশিত ছিল না।
‘আমাদের সাংবাদিক ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েই আমরা চিন্তিত। তবে বর্তমান সময়ে এসে দেশের সব মানুষই নাগরিক সাংবাদিক হয়ে গেছেন। সামরিক বাহিনীর তথ্যের প্রবাহ বন্ধ করার কোনো উপায় নেই।’ এসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন সংবাদমাধ্যমটির নির্বাহী পরিচালক আয়ে চান নায়িং।
অভ্যুত্থানের পর থেকেই আন্দোলনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সয়লাব করে ফেলেছেন আন্দোলনের বিভিন্ন ফুটেজ দিয়ে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সেনাবাহিনীর আক্রমণের প্রমাণ রাখতে তারা ফেসবুক লাইভ অপশন ব্যবহার করছেন। ফেব্রুয়ারিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু অনেকেই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের (ভিপিএন) মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার অব্যাহত রেখেছেন। তবে রাতের বেলা সেনাবাহিনী বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অভিযান চালানোর সময় দেশব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধ রাখে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার রাতে দেশটির ইয়াঙ্গুন শহরের সানচুয়াং টাউনশিপের ফোর-স্ট্রিট এরিয়া থেকে ২০০ মানুষকে বের হতে দেয়নি সামরিক জান্তা বাহিনীর সদস্যরা। এসসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, আশ্রয় নেওয়া আন্দোলনকারীদের খুঁজে বের করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালানো হয়। একটি অধিকারবাদী সংগঠন রয়টার্সকে জানিয়েছে, পুলিশ অভিযান চালানোর পর ওই এলাকা থেকে ৫০ জনকে আটক করা হয়।
গ্রেপ্তার ও সহিংসতা ছাড়া আটকে পড়া আন্দোলনকারীদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
এএফপি’র একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন, ওই এলাকা থেকে প্রচণ্ড শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরিষ্কারভাবে বোঝা না গেলেও ওই শব্দ গুলির কিংবা গ্রেনেডের শব্দ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই এলাকা থেকে ধারণ করা এক ফেসবুক লাইভে অব্যাহত চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
সোমবার গুলিবর্ষনে তিনজন আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার পরই ইয়াঙ্গুনের এই অভিযান চালানো হয়। মিতকিয়িনা শহরে আন্দোলনকারীদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে মারা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।
এএফপির সূত্রে জানা যায়, “ঘটনাস্থলেই গুলিবর্ষণে দুইজন মারা যান। এছাড়া একজন নারীসহ তিনজন বাহুতে গুলিবিদ্ধ হন।”
ইরাওয়াড্ডি ডেল্টা অঞ্চলের প্যাপন শহরে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরেকজন মারা যান, এএফপিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী।
যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কায়াও জোয়ার মিন অং সান সু চি’র মুক্তি চেয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন।
সরকারি কর্মকর্তারা আন্দোলনে অংশ নিলে সাথে সাথে তাদের ছাটাই করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে দেশটির সামরিক জান্তা। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান