খবর৭১ঃ বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি-জাতির জন্য যে উন্নত জীবনের কথা ভেবেছিলেন, তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন করে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ মার্র্চের ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে রেসকোর্সের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা প্রদান করলেন স্বাধীনতার পথ-নকশা। যুদ্ধ অনিবার্য জেনে তিনি শত্রুর মোকাবিলায় বাঙালি-জাতিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন: ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে প্রস্তুত থাকো।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের এই সম্মোহনী আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি-জাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা গণহত্যা শুরু করলে জাতির পিতা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন। দুই লাখ মা-বোন সম্ভ্রমহারা হন। বহু ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ছিনিয়ে আনি মহান স্বাধীনতা, বাঙালি জাতি পায় মুক্তির কাঙ্ক্ষিত স্বাদ। প্রতিষ্ঠা পায় স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।’
বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার এই ভাষণের দিকনির্দেশনাই ছিল সে সময় বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে অমিত শক্তির উৎস ছিল এ ঐতিহাসিক ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ আমাদের ইতিহাস এবং জাতীয় জীবনের এক অপরিহার্য ও অনস্বীকার্য অধ্যায়, যার আবেদন চির অম্লান। কালজয়ী এই ভাষণ বিশ্বের শোষিত, বঞ্চিত ও মুক্তিকামী মানুষকে সবসময় প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।’
‘৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতাকামীদের প্রেরণার উৎস’
এদিকে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কেবল বাঙালির নয়, বিশ্বব্যাপী স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য প্রেরণার চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বজ্রকণ্ঠে যে কালজয়ী ভাষণ দিয়েছিলেন, তার মধ্যে নিহিত ছিল বাঙালির মুক্তির ডাক। সরকার এ দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে, যা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এ দিনে তিনি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যাঁর অনন্য সাধারণ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে অর্জন করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
আবদুল হামিদ বলেন, স্বাধীনতা বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে তা একদিনে অর্জিত হয়নি। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ এর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের এই দীর্ঘ বন্ধুর পথে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম সাহস, সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সঠিক দিকনির্দেশনা জাতিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, এমনি অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতার সাথে রেসকোর্স ময়দানে লাখো-জনতার উদ্দেশ্যে যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন, তা ছিল মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। অনন্য বাগ্মিতা ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ভাস্বর ওই ভাষণে বাঙালির আবেগ, স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকে একসূত্রে গেঁথে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, যা ছিল মূলত স্বাধীনতার ডাক। ঐতিহাসিক সেই ভাষণের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির বহুকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতি অর্জন করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।’