খবর৭১ঃ
ব্যবহারে লাগছে না এমন পণ্য বিক্রিকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গড়ে উঠেছে অজস্র গ্রুপ। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় অনলাইন যোগাযোগ বৃদ্ধির ফলে এসব গ্রুপে নানাজন নতুন-পুরাতন পণ্য বিক্রির পোস্ট দেন। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গ্রুপগুলোতে সক্রিয় প্রতারক চক্র।
বিভিন্ন নামে থাকা এসব গ্রুপের মধ্যে ‘রিসাইকেল বিন’ নামে সক্রিয় রয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রুপ। এসব গ্রুপে চুরি-ডাকাতি ছিনতাইয়ের মোবাইল, ইলেকট্রনিক্স মালামালসহ বিভিন্ন পণ্য বিকিকিনি হচ্ছে। অনেকেই সরল বিশ্বাসে এখান থেকে পণ্য কিনে পড়ছেন আইনি জটিলতার মুখে। এছাড়া পণ্য বিক্রির নামে প্রতারক চক্র একাধিক জনের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে পরে লাপাত্তা হয়ে যায়।
আইনশৃঙ্খলা বহিনী বলছে, এসব গ্রুপে বেশিরভাগই অবৈধ পণ্য বিক্রি হচ্ছে। পণ্য বিক্রির নামে প্রতারকরা নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। কিছু গ্রুপের পরিচালনাকারীরা (এডমিন) গেট টুগেদারের নামে বড় কোম্পানির কাছে স্পন্সর হিসেবে অনুদানও নিচ্ছেন। অনুমোদন না থাকায় এভাবে আর্থিক লেনদেন তারা করতে পারে না। এসব গ্রুপ ঘিরে প্রায় অভিযোগ জমা পড়ছে।
অনলাইনে পণ্য বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগের বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সাইদ নাসিরুল্লাহ ঢাকা টাইমসকে জানান, পণ্য বিক্রির নামে সামাজিক যোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে এমন গ্রুপের ছড়াছড়ি।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সাইদ নাসিরুল্লাহ বলেন, ‘রিসাইকেল বিন নামে কিছু গ্রুপ খোলা হয়েছে পণ্য বিক্রির প্লাটফর্ম হিসেবে। এই নামের কোনো কপিরাইট না থাকার কারণে যে কেউ চাইলে গ্রুপ খুলতে পারছে। আর মানুষ রিসাইকেল বিন নাম দেখেই মেম্বার হয়ে যাচ্ছে। গ্রুপে হওয়ার পরেই বেচাকেনা করছেন।’
সুলভে পণ্য কেনার জন্য অনেকেই এ ধরণের গ্রুপগুলোকে প্রয়োজন ভেবে সাধারণ ব্যবহারকারীরা সহজেই যুক্ত হচ্ছেন জানিয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সাইদ নাসিরুল্লাহ বলেন, ‘যেহেতু এটা সকলের প্রয়োজনের জায়গা, তাই সবাই বাইসেল করছে। ফলে এখানে অনেক বড় ধরনের কেনাবেঁচা হচ্ছে।’
‘দেখা গেছে প্রতি সপ্তাহে এসকল গ্রুপে লাখ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। যেভাবে বিক্রি বাড়ছে, তাতে বলা চলে কোটি টাকার ঘর ছাড়াবে’─ যোগ করেন সাইদ নাসিরুল্লাহ।
সাইবার ক্রাইম বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘রিসাইকেল বিন নামের গ্রুপ নাম দিয়ে ফেইক গ্রুপ ও ফেইক মেম্বারের পাশাপাশি গ্রুপের পক্ষ থেকে যুক্ত হওয়া সদস্যদের বেশি করে সদস্য অ্যাড করার জন্য প্রলোভন দেখানো হয়। অনেকেই তার পরিচিত সদস্যদের যুক্ত করে দিচ্ছেন। পণ্য বিক্রির পোস্ট দেয়ার ক্ষেত্রেও সদস্য যুক্ত করার বিষয়টি দেখা হচ্ছে। ফলে এখানে এক ধরনের রেশারেশি বাড়ছে। এভাবে বাড়ছে ফেইক বা ভুয়া আইডি।’
গ্রুপে পণ্য বিক্রি ও সদস্য যুক্ত করার এই প্রতিযোগিতার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে প্রতারকরা সক্রিয় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা দেখলাম মানুষের বেশি প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো অল্প দামে বিক্রির পোস্ট দিয়েছে। সিরামিকসের পণ্য, দামি তৈজসপত্র ও বিভিন্ন দামি ব্রান্ডের পণ্য কম দামে বিক্রির পোস্ট দিচ্ছে। অল্প দামে ভালো ব্রান্ডের পণ্য দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করে পোস্টে কমেন্ট করার পরে ইনবক্সে গিয়ে প্রতারকরা জানায়, দেখেন অনেকেই পণ্যটি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আপনি নিতে চাইলে অগ্রিম কিছু দাম দিয়ে বুকড করে রাখেন। এভাবে আগ্রহীকে বার্তা পাঠায় প্রতারকরা। তখন সাধারণ মানুষ সরল বিশ্বাসে পাঁচশ বা এক হাজার টাকা বিকাশ বা অন্য মাধ্যমে তাদের কাছে পাঠায়। এভাবে একই পণ্যের কথা বলে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে তারা টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে।’
সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করা পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে এভাবে পণ্য বিক্রি করা অবৈধ। এখানে ক্রেতা বিক্রেতাকে চেনে না। বিক্রেতা তার জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্য কিছু দিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করছে না। শুধু একটি ফেসবুক আইডিই হচ্ছে তার পরিচয়। আবার আইডিটাও অনেক সময় লকড। যেকারণে বিক্রেতার পরিচয় জানতে পারছেন না ক্রেতা। ফলে খুব সহজেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
এসব গ্রুপে অবৈধ পণ্য বিক্রির পাশাপাশি কোনো রশিদ দিতে হচ্ছে না আর এ কারণে পণ্যগুলো বৈধ না অবৈধ, চুরি করা কিনা তাও বুঝতে ক্রেতা বুঝতে পারেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ মোবাইল চুরি করে অনলাইনে বিক্রি করে দিচ্ছে। এমনকি ছিনতাই হওয়া মোবাইলও বিক্রি হচ্ছে।’
‘দেখা গেছে অবৈধভাবে পণ্য অর্জন করে সেই পণ্য এখানে বিক্রি হতে পারে। ফলে এসকল মাধ্যমে অনেক বড় একটি অপরাধ হচ্ছে। তারা যেভাবে সামনে যাচ্ছে তাতে এখানে ভবিষ্যতে আরো ভয়ংকরভাবে অপরাধের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে’।
সাইদ নাসিরুল্লাহ জানান, এ ধরনের গ্রুপে পণ্য বিক্রেতাদের হাতে ক্রেতা প্রতারিত হলে প্রতারণার শিকার কেউ অভিযোগ দিলে গ্রুপ এডমিনরা ফেঁসে যাবেন। কারণ আইনের ধারা অনুযায়ী গ্রুপের দ্বারা প্রতারণার দায় তারা এড়াতে পারে না।
এরইমধ্যে কিছু গ্রুপে এমন প্রতারণার শিকার ব্যক্তিদের অভিযোগ পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার।
তিনি বলেন, ‘সেগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। যেহেতু বড় কোনো অপরাধ ঘটার আগে আমাদের চোখে বিষয়টি এসেছে। আমরা বিভিন্ন গ্রুপের অ্যাডমিন প্যানেলের সদস্যদের খুব দ্রুতই ডাকা শুরু করবো।’
এভাবে কেউ প্রতারিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবস্থা নেবো। এছাড়া এভাবে কেনাবেচার ব্যাপারে ক্রেতাদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেবো।’
এছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন না নিয়ে এভাবে আর্থিক লেনদের করার কারণে কোনো অপরাধ ঘটলে গ্রুপ পরিচালনায় যুক্তদের দায়ভার নিতে হবে বলেও সতর্ক করেন কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের এ কর্মকর্তা।