খবর৭১ঃ
প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার চিঠি পৌঁছার মাত্র ঘণ্টাদুয়েক আগে তিনি বেনাপোল বন্দর দিয়ে পালিয়ে যান। ভারত হয়ে তিনি কানাডায় যান এবং এখন সেখানেই বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন ইউনিটের পক্ষ থেকে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে দায়িত্বরত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে মৌখিকভাবে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে দায়িত্বরত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, পি কে হালদার যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য এসবি পুলিশকে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের এই চিঠি ডাকযোগে পাঠানো হয়। এর পরদিন ২৩ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৪টায় এই চিঠি পায় এসবি’র সদর দপ্তর। এরপর সদরদপ্তর থেকে এসবির সকল ইমিগ্রেশন ইউনিটকে ওইদিন বিকাল ৫টা ৪৭ মিনিটে ইমেইলযোগে এই চিঠি পাঠানো হয়। এই চিঠি পাওয়ার দুই ঘন্টা ৯ মিনিট আগেই বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান পি কে হালদার।
এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছিলেন পি কে হালদারের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে। তখন আদালত জানতে চান পাসপোর্ট জব্দ থাকার পরও তিনি কীভাবে পালিয়ে যান। একইসঙ্গে পি কে হালদার যেদিন দেশ ত্যাগ করেছিলেন, সেদিন বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের দায়িত্বরতদের এবং দুদকের দায়িত্বে কে কে ছিলেন তার তালিকাও দাখিল করতে বলেছিলেন আদালত। পি কে হালদারের পালানোর বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে মৌখিকভাবে তথ্য জানালো এসবি’র ইমিগ্রেশন ইউনিট।
পি কে হালদারের জন্ম পিরোজপুরের নাজিরপুরে। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা করেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইআইডিএফসিতে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পরিচালক ছিলেন পি কে হালদার। ১০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিয়েই ২০০৯ সালে তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি হয়ে যান। এরপর ২০১৫ সালের জুলাইয়ে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন।
পি কে হালদার জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হতে বসেছে এবং গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এসবের মাঝেই পিকে হালদার গোপনে দেশ ছাড়েন। একপর্যায়ে পি কে হালদারের বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেই সাথে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও তার গ্রেপ্তারে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চান উচ্চ আদালত। অন্যদিকে গত ৮ জানুয়ারি পিকে হালদারকে গ্রেপ্তারে রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল।