খবর৭১ঃ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানিয়েছেন, দেশবাসীকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য পূরণ হওয়ার পর তিনি করোনার টিকা নেবেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে তালিকাভুক্ত হওয়া উপলক্ষে শনিবার বিকালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন সরকারপ্রধান।
কোভিশিল্ড টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদন হচ্ছে। দেশের শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী তিন কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশকে দেবে সেরাম ইনস্টিটিউট।
দুটি চালানে ইতিমধ্যে ৭০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। আর ২০ লাখ ডোজ পাওয়া গেছে ভারতের উপহার হিসেবে। এখন পর্যন্ত সিরাম থেকে এসেছে বাংলাদেশের কেনা ৭০ লাখ আর ভারতের উপহারের টিকা।
কোভিশিল্ডের প্রথম চালান আসার পর দেশে গত ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। ওই দিন ২১ জনকে টিকা দেয়া হয়। পরদিন রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে ৫৪৬ জনকে পর্যবেক্ষণমূলক টিকা দেয়া হয়েছিল। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয়ভাবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলছে।
টিকা গ্রহীতার তালিকায় যেমন সাধারণ মানুষ রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেখ রেহানা প্রথম টিকা নিলেও এখনও টিকা নেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পাশে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অবশ্যই টিকা নেব। তবে দেশের মানুষকে আগে দিতে হবে। আমার ৭৫ বছর বয়স। আজ আছি, কাল নেই। একটা টার্গেট করা আছে। সে পরিমাণ যখন দেওয়া হবে, তখন যদি টিকা থাকে, তাহলে তখন টিকা নেব।’
সরকারপ্রধান আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে ২৮ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন।
করোনা মহামারি মোকাবিলা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, এটা কোনো ম্যাজিক নয়, আন্তরিকতা, দায়িত্ববোধ। এ জায়গা থেকে কাজ করেছি। এখানে আমার নয়, বাংলাদেশের জনগণের ম্যাজিক ছিল।
পাকিস্তান আমলে বাংলার বঞ্চনার ইতিহাস সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের পর উন্নয়নের লক্ষ্যে যাত্রার শুরুর কথাও বলেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, একটা প্রদেশের প্রশাসনকে তিনি (বঙ্গবন্ধু) অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে একটা স্বাধীন দেশের উপযোগী করে একেবারে শূন্য হাতে দেশের পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন। ভারত থেকে ফিরে আসা এক কোটি শরণার্থীসহ দেশের অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষকে পুনর্বাসন করেন। শহীদ পরিবার, নির্যাতিত পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা, ঘরবাড়ি হারানো সকলকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ৭ শতাংশ অতিক্রম করে। বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবেশ করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশের উল্টো পথে যাত্রা এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর আবার উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন মূখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। এরপর প্রধানমন্ত্রীর হাতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।