খবর৭১ঃ চলমান তিনটি বিসিএস পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন। তবে ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময় বাড়িয়ে দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে পিএসসি চেয়ারম্যান জানান, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিসিএস পরীক্ষাগুলো বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সঙ্গে সমন্বয় করে পেছানোর ইঙ্গিত দিলেও তারা মনে করছেন শিক্ষামন্ত্রী শুধু ৪৩তম বিসিএসের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
সোহরাব হোসাইন বলেন, তারপরেও অন্য বিসিএসগুলোর বিষয়েও কোনো পরামর্শ এলে কমিশনের বৈঠকে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে ‘পরীক্ষা ও প্রার্থীবান্ধব’ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। ৪১ কিংবা ৪২তম বিসিএসের পরীক্ষা অনেক আগেই হয়ে যেত। সব প্রক্রিয়া শেষে শুধু পরীক্ষা গ্রহণ বাকি আছে। তাই এগুলো পেছানোর তেমন কোনো যুক্তি নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় না খোলায় ৪৩তম বিসিএসের আবেদনের সুযোগ থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হয় সেটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
আগামী ৬ আগস্ট ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, যার জন্য আবেদনের সুযোগ দেয়া আছে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
এছাড়াও এখন যে তিনটি পরীক্ষার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে তার মধ্যে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অন্যদিকে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য বিশেষ বিসিএস বা ৪২তম বিসিএস পরীক্ষা হওয়ার কথা ২৬ ফেব্রুয়ারি।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় এক বছর ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে ক্লাস পরীক্ষা ঠিক মতো না হওয়ায় বিসিএস পরীক্ষাগুলো পেছানোর দাবি আসছিল শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হল খুলে দেয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন চলছে তাতেও এ প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ও ৪১তম বিসিএসের একজন পরীক্ষার্থী জিহাদুল কবির বলছেন, বিসিএসের নিরবচ্ছিন্ন প্রস্তুতির জন্য শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগই হলে থাকতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন হল বন্ধ। বাড়িতে বা মেসে থেকে ওভাবে প্রস্তুতি নেয়া যায় না। অথচ পরীক্ষাগুলো এসে যাচ্ছে। দ্রুত হল খুলে দেয়া উচিত এবং পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় বাড়িয়ে দেয়া উচিত।’
৪১তম বিসিএসের আরেকজন পরীক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বদরুন্নাহার বর্ণ বলছেন, শিক্ষামন্ত্রী পেছানোর ইঙ্গিত দিলেন আর পিএসসি চেয়ারম্যান না বললেন। এভাবে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় মে মাসে খুলবে এবং তার আগে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে ৪১তম বিসিএস পিছিয়ে দেয়াই যুক্তিসঙ্গত হবে। কারণ এত বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়ার আয়োজন করাও সহজ ব্যাপার হবে না।’
প্রসঙ্গত, ৪১তম বিসিএসে অংশ নেবে চার লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী। দুই হাজার ১৩৫ জন কর্মকর্তা নিয়োগের উদ্দেশ্যে গত বছর জানুয়ারি থেকেই এ পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত করোনার জন্য আর পরীক্ষা নেয়া যায়নি।
আর ৪২তম বিসিএস হিসেবে বিশেষ পরীক্ষা হচ্ছে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য। দুই হাজার সহকারী সার্জন নিয়োগের এ পরীক্ষার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল গত বছরের শুরুতে। শেষ পর্যন্ত ২৬ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
অন্যদিকে ৪৩তম বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পাবে এক হাজার ৮১৪জন এবং এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য আবেদনের সুযোগ আছে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
এর বাইরে এখন ৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। কিন্তু এখন যেহেতু ২৪ মে’র আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা হচ্ছে না, সে কারণে বিসিএস পরীক্ষাগুলোও তার সাথে সমন্বয় করে পিছিয়ে দেয়ার দাবি উঠেছে।
সোমবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে হল খুলে দেয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাতেও এ প্রসঙ্গটি এসেছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বিসিএস পরীক্ষার আবেদনের সময় পার হয়ে কোনো শিক্ষার্থী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়েও সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, অনেকে বিসিএস পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন, অপেক্ষা করছেন, তাদের জন্য বলছি- বিসিএস পরীক্ষার আবেদন ও পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দেয়া অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার তারিখের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নতুন তারিখ ঘোষণা করা এবং করোনার কারণে বিসিএসের আবেদনের সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়ে যেন কোনো শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
তবে পিএসসি চেয়ারম্যান বলছেন, শিক্ষামন্ত্রী ৪৩তম বিসিএসের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন বলে তারা মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় খুলেনি তাই জাতীয় স্বার্থেই এটি আমরা বিবেচনা করবো। এছাড়াও সরকারের দিক থেকে আসা যেকোনো পরামর্শই আমরা কমিশনের বৈঠকে আলোচনা করবো। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনা করেই পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে যাতে পরীক্ষার্থীদের কেউ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়।’