বিশিষ্ট নাগরিকদের অভিযোগ ভিত্তিহীন-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

0
368
বিশিষ্ট নাগরিকদের অভিযোগ ভিত্তিহীন-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত

খবর৭১ঃ নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে বিশিষ্ট নাগরিকদের আনা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন। একইসঙ্গে সিইসি দাবি করেছেন, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি পদে ২ থেকে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোট পড়ে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ। নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা চলে গেছে এমন মন্তব্যও ভিত্তিহীন।

নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে আর্থিক ও নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুতর অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দেন দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। পরে সংবাদ সম্মেলন করে তারা বিষয়টি গণমাধ্যমকে অবহিত করেন। বিশিষ্ট নাগরিকদের পক্ষে রাষ্ট্রপতির কাছে ওই চিঠি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক, যিনি নিজে এক সময় ইসির আইনজীবী ছিলেন। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিভিন্ন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসা অবসরপ্রাপ্ত সচিব আকবর আলি খান, অবসরপ্রাপ্ত মহা হিসাব-নিরীক্ষক এম হাফিজউদ্দিন খান, মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ।

বিশিষ্টজনদের সংবাদ সম্মেলনের পাঁচ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার বিকালে নির্বাচন ভবনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরল ইসি। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার উপস্থিত ছিলেন না। নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সিইসি নূরুল হুদা। তিনি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান।

বক্তব্যের শুরুতেই সিইসি বলেন, ইসির বিরুদ্ধে ৪২ নাগরিকের আনা অভিযোগ নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। বিষয়টি কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা প্রয়োজন বলে এই সংবাদ সম্মেলন। ইসিকে দায়ী করে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তা অনভিপ্রেত ও আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। বক্তব্যে শেষে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করতে চাইলে তিনি জানান, কোনো প্রশ্ন নেওয়া হবে না।

বক্তৃতার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগের জবাবে সিইসি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রশিক্ষণের জন্য ১৫ জন বিশেষ বক্তার সম্মানী ভাতা বাবদ এক কোটি ৪ লাখ টাকা এবং পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪৭ লাখ ৭০ হাজার টাকার সংস্থার রাখা হয়। ১৫ জন বিশেষ বক্তার জন্য কর্মপরিকল্পনায় ২ কোটি টাকার বরাদ্দই ছিল না। বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা দেওয়ার নামে ২ কোটি টাকার মত আর্থিক অসদাচরণ ও অনিয়মের অভিযোগ অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে। যা ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী সকল ব্যয় অডিট যোগ্য। অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি না হলে ব্যয়কৃত অর্থ কোষাগারে ফেরত যাবে। সমস্ত প্রক্রিয়া দালিলিক প্রমাণ ভিত্তিক, এ ক্ষেত্রে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।

ইসির কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে নূরুল হুদা বলেন, কোনো প্রমাণ ছাড়াই ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা দুর্নীতি করা করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। নিয়োগ প্রক্রিয়াটি ছিল নিরপেক্ষ স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত।

গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনারেরা তাদের প্রাধিকারভুক্ত একটি জিপ ও একটি কার এবং তার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করেন। নতুন গাড়ি বিলাসবহুল তো নয়ই, অতি সাধারণ মানের। নির্বাচন কমিশনারেরা গাড়ি বিলাস করেনি বরং ৩ বছর ৬ মাস প্রাধিকারভুক্ত গাড়ি পাননি। তারা প্রকল্প থেকে সচিবালয়ের জন্য দেওয়া গাড়ি শেয়ার করে ব্যবহার করেছেন মাত্র। কাজেই নিয়মবহির্ভূতভাবে তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ইভিএম ক্রয় ও ব্যবহারে অসদাচরণ ও অনিয়মের অভিযোগের জবাবে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, ইসি ইভিএম আমদানি করেনি। সরকারি ক্রয় নীতিমালা (পিপিআর) অনুসরণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তা ক্রয় করা হয়েছে। বিল সরকারিভাবে সরাসরি সেনা কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করা হয়। এ কাজে ইসি আর্থিক লেনদেনে সম্পৃক্ত থাকে না। এখানে দুর্নীতির কোন প্রশ্ন ওঠে না।

নির্বাচনে গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগের জবাবে সিইসি বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা কোনো অভিযোগ তোলেননি। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ দল সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন। গণমাধ্যমেও গুরুতর অনিয়ম অসদচারণের কোন বিষয় প্রচার করা হয়নি। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি আদালতের দ্বারস্থ হয়ে থাকলেও আদালত থেকে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল বা পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো আদেশ এখন পর্যন্ত ইসি পায়নি।

ইসি ভোটে অনিয়ম সংক্রান্ত যেকোনো অভিযোগ আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে দাবি করে সিইসি বলেন, এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে যে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে তা অনভিপ্রেত এবং আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here