খবর৭১ঃ
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেছেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বিজিবি সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছে। ১৭ ডিসেম্বর ভারত-বাংলাদেশ শীর্ষ বৈঠকে এবং দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনাতেও বিষয়টি এসেছে। এ ছাড়া কূটনৈতিকভাবেও এই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
বিজিবি দিবস উপলক্ষে রোববার সকালে ঢাকার পিলখানায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিবির রেজিমেন্টাল পতাকা উত্তোলন এবং ‘সীমান্ত গৌরব’-এ মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিবিপ্রধান এসব কথা বলেন।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি- সীমান্তবর্তী জনগণকে শিক্ষা-দীক্ষায় এবং অর্থনৈতিকভাবে যদি স্বাবলম্বী করতে পারি; তাহলেই সীমান্ত হত্যা কমে যাবে।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বিজিবির পক্ষ থেকে ১০০ জেলেকে নৌকা দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের মাছ ধরার জন্য জাল দেয়া হবে। দেশের জেলেরা দাদনের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। জেলেরা যাতে দাদন থেকে মুক্ত হয়ে নিজেরা নিজেদের জীবিকা ধরে রাখতে পারে সেজন্য আমরা এ কর্মসূচি করেছি। তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি যেন অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম না করেন। সীমান্তের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেও জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিজিবির সাফল্য ও ব্যর্থতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে টেকনোলজির দিক দিয়ে এগিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে। টেকনোলজির সঙ্গে বিজিবিকে এগিয়ে নিতে হলে বাহিনীতে আধুনিক টেকনোলজি স্থাপন করা প্রয়োজন। এছাড়াও বিজিবির সব সদস্যের প্রয়োজন টেকনোলজিক্যাল প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা।
পাহাড়ি এলাকায় এখন কিছু সীমান্ত অরক্ষিত রয়েছে জানিয়ে বিজিবিপ্রধান বলেন, এক বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট (বিওপি) থেকে আরেক বিওপির দূরত্ব ৮ থেকে ১০ কিলোমিটারের মতো। সেখানে নতুন বিওপি স্থাপন করে এই দূরত্ব কমাতে হবে। গ্যাপ কমিয়ে আনা একটা চ্যালেঞ্জ, পাশাপাশি প্রযুক্তিগতভাবে আমাদেরকে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিবার বিজিবি দিবস খুব জমকালোভাবে উদযাপন করা হয়। এবছর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সীমিত আকারে দিবসটি পালন করছি আমরা।
বিজিবি সূত্র জানায়, রোববার সকালে মহাপরিচালকের বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিজিবি দিবস-২০২০ এর বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে দেশের সব প্রান্ত থেকে বিজিবি সদস্যরা যুক্ত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১১ মাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তে সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪২ বাংলাদেশির। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে সীমান্ত হত্যা কিছুটা কমলেও ২০১৯ সালে সেটি তিন গুণ বাড়ে। সংস্থাটির আরেক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সীমান্তে ১৫৮ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন।