খবর৭১ঃ
সরকার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর মাধ্যমে বিমান চলাচল, বিমান নির্মাণ, গবেষণা, মহাকাশবিজ্ঞান চর্চা হবে। আমি আশা করি এর মাধ্যমে একদিন হয়তো বাংলাদেশে যুদ্ধ বিমান, পরিবহন বিমান এবং হেলিকপ্টারও তৈরি করতে সক্ষম হবে, ইনশাআল্লাহ।’
রবিবার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমি, যশোরে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ– ২০২০ (শীতকালীন) অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে তার সরকারের আরও আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিমান বাহিনীকে উন্নত ও আধুনিকায়নে ভবিষ্যতে আরও আধুনিক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন যুদ্ধবিমান ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয়ের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিমান বাহিনীতে শিগগিরই যুক্ত হবে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, আনম্যান্ড এরিয়াল ভেহিকেল সিস্টেম, মোবাইল গ্যাপ ফিলার র্যাডার এবং সর্বাধুনিক এয়ার ডিফেন্স র্যাডার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যাধুনিক পাঁচটি সি-১৩০জে পরিবহন বিমান কেনার জন্য চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে, যার তিনটি বিমান ইতোমধ্যে দেশে এসে পৌঁছেছে। বৈমানিকদের উন্নততর প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে আরও সাতটি অত্যাধুনিক কে-৮ডব্লিউ জেট ট্রেইনার বিমান সংযোজন করা হয়েছে এবং অচিরেই যুক্ত হতে যাচ্ছে পিটি-৬ সিমুলেটর।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখন হয়তো কোভিড-১৯ এর কারণে আমরা বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারছি না। তবে, আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে বিমান বাহিনীকে আরও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উদ্যোগে লালমনিরহাটে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিমান চলাচল, বিমান নির্মাণ, গবেষণা, মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চা হবে। তাছাড়া মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে একদিন মহাকাশে যাওয়াও সম্ভব হতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সশস্ত্র বাহিনীর সাফল্যজনক অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বাহিনী যারা আসেন তাদের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। কোনো কিছুতেই বাংলাদেশ যেন পিছিয়ে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই যে ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দরকার আমরা তা করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ক্যাডেটদের বলবো বিমান বাহিনীর অনন্য প্রশিক্ষণের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তোমরা নিজেদেরকে এমনভাবে গড়ে তুলবে যাতে আমাদের এই বাংলাদেশ তোমাদের মতো তরুণদের কাছে যেটা প্রত্যাশা করে সেটা তোমরা পূরণে সক্ষম হও।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা হেলিকপ্টার সিমুলেটর ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং এয়ারম্যান ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদন করেছি। বর্তমানে শুধু শিক্ষা নয়, শিক্ষার সাথে প্রযুক্তি ও শিল্পায়নের সংমিশ্রণে শিল্পনির্ভর জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশে বিমান বাহিনীর ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে রূপকল্প ২০৪১ এর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় বিমান বাহিনী আরও একধাপ এগিয়ে যাবে এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানে সরকার সবসময় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পাশে থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনীর মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট উপভোগ করেন। এসময় তাকে মনোজ্ঞ কুচকওয়াজের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়।
এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ৭৭ তম বাফা কোর্স এবং ডিরেক্ট এন্ট্রি-২০২০ কোর্স সম্পন্নকারীদের মাঝে ফ্লাইং ব্যাজ, ট্রফি এবং অন্যান্য পুরস্কার বিতরণ করেন।
স্কোয়াড্রন জুনিয়র অফিসার শাকিল আহমেদ শ্রেষ্ঠ চৌকষ ক্যাডেট হিসেবে অনুষ্ঠানে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন।