খবর৭১ঃ পুলিশে চাকরি করলে কোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়ানো যাবে না বলে সতর্ক করেছেন বাহিনীটির মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেছেন, পুলিশে যারা দুর্নীতি করতে চান তারা চাকরি ছেড়ে দিন। এখানে (পুলিশে) দুর্নীতির সুযোগ নেই। অন্য পেশার মানুষ কে কী করলো সেটা জনগণ ভাবে না। কিন্তু পুলিশ দুর্নীতি করে তাই নিয়ে মানুষ সমালোচনা করে।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটোরিয়ামে ‘পুলিশে সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার প্রচলন’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যারা পুলিশি পেশায় আসবেন তাদের মনে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য থাকলে এই চাকরিতে আসার দরকার নেই। পুলিশ একসময় দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারের ওপর জয়ী হবে। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। পুলিশ বাহিনীতে আমরা যারা আছি, সবাই সম্মানের সঙ্গে চাকরি করতে চাই।
আইজিপি বলেন, পুলিশ জনগণ নিয়ে কাজ করে। আর জনগণের জন্য কাজ করতে গেলে পুলিশে আচরণগত পরিবর্তন আনতে হবে। দেশবাসীর উদ্দেশে বলতে চাই- পুলিশে এই জায়গায় পরিবর্তন আনার জন্য গুণগত কাজ করে যাচ্ছি। পরিবর্তন অনেক সময় কষ্টসাধ্য বিষয়, তবে পরিবর্তনের সেই প্রয়াস আমরা শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ এই পরিবর্তনের সুফল দেশবাসী শিগগিরই পাবে।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিজয়ের জাতি, বীরের জাতি। যখনই আমরা কোনো বিষয়ে মনোসংযোগ করেছি, লক্ষ্য ঠিক করেছি তখনই বাঙালি জাতি সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে। উন্নত বিশ্বে রুটিন ডিউটিতে পুলিশ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেন না। এখন থেকে আমরাও সেই বিষয়টি প্রচলন করতে চাই। প্রথমে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আগামীকাল থেকে এটি ব্যবহার করবে। এরপর ধাপে ধাপে সবক্ষেত্রে এটির প্রচলন করা হবে। আশা করছি আগামী এক মাসের মধ্যে ডিএমপি ও সিএমপি তাদের সদস্যদের নতুন ধারার সঙ্গে যুক্ত করতে পারবে। এর ফলে পুলিশ সদস্যরা কোনো ধরনের অস্বস্তি ছাড়া দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
আমরা চাই না ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ একহাতে ওয়্যারলেস ধরে থাকুক, এক হাত অকোপাইড হয়ে থাকুক। নতুন গিয়ার সংযোজনের ফলে ওয়্যারলেস চলে যাবে বেল্টে। কাঁধে সংযোজিত মাইক্রোফোনের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যরা ওয়্যারলেস ব্যবহার করতে পারবেন।
অপারেশনাল গিয়ার সংযোজনকে পুলিশের হার্ডওয়্যারগত পরিবর্তন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর পাশাপাশি সফটওয়্যারগত পরিবর্তন অর্থাৎ আচরণগত পরিবর্তন জরুরি। আমরা চাই পুলিশের সর্বকনিষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ পদের সদস্যদের আচরণ হবে সর্বোচ্চ অনুকরণীয়। হার্ডওয়্যারগত পরিবর্তন করে প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব না, এজন্য সফটওয়্যারগত পরিবর্তন দরকার। মনোজগতের পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা দ্রুতই নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।
রুটিন ডিউটিতে পুলিশের ক্ষুদ্রাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়বে এবং এর সুবিধা দেশবাসী ভোগ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
পুলিশে সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ারের সঙ্গে সংযুক্ত অস্ত্র আমদানি করা হয়েছে কি না এবং আগে ব্যবহৃত বড় অস্ত্রগুলো বাতিল হয়ে যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অস্ত্র আমরা তৈরি করি না। অস্ত্র আমাদের আমদানি করতে হয়। অন্যদিকে বড় অস্ত্র বাতিল হবে না। তবে থানার গেটে, জঙ্গি, হাঙ্গা-দাঙ্গামা ও রাজনৈতিক কোনো প্রোগ্রামে বড় অস্ত্রের ব্যবহার হবে।
নতুন এই সংযোজনের সঙ্গে বডি অন ক্যামেরা যুক্ত হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে আমি যখন ডিএমপি কমিশনার ছিলাম তখন থেকেই ডিএমপি পুলিশের শাহবাগে বডি অন ক্যামেরা যুক্ত করি। হয়তো বিস্তৃত হয়নি । চলতি বছর থেকে আমরা পর্যায়ক্রমে বিস্তৃত করবো।
অনেক পত্রিকা শিরোনাম করেছে ‘থানায় বসে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়’। কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যখন এই ধরনের তথ্য আসে তখন থানা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘থানায় কোনো হত্যার পরিকল্পনা হতে পারে না। থানা হলো মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্য, কোনো মানুষের জীবন নেয়ার জন্য নয়।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এডমিন) মো. মাঈনুর রহমান চৌধুরী