সুদীপ্ত শামীম, স্টাফ রিপোর্টারঃ
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই মাসে লাখো প্রাণ ও লাখো মা-বোনের উজ্জতের বিনিময়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল দেশের মুক্তিকামী মানুষ। এই মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারীদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্টিত হয় লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। আর বিজয়ের মাসে মানুষ বাড়ির ছাদ ও গাড়ির সামনে জাতীয় পতাকা টাঙিয়ে রাখেন। ১৬ ডিসেম্বর সব অফিস ও প্রতিষ্ঠানেও উড়ানো হয় জাতীয় পতাকা। তাই বিজয়ের মাসে লাল সবুজের জাতীয় পতাকার চাহিদা থাকে বেশি। তাই বিজয়ের মাসকে ঘিরে ধুম পড়েছে জাতীয় পতাকা বিক্রির।
সবুজ চাদরে গাঢ় লালের ছোঁয়া। প্রতিক্ষণে মনে করিয়ে দেয় দেশের স্বাধীনতার কথা আর বিজয়ের স্মৃতি। একাত্তর সালে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে ডিসেম্বরে অর্জিত হয় বিজয়ের এ পতাকা। তাই ডিসেম্বর এলেই পথে-প্রান্তরে, হাটে-বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন ফেরি করে বেড়ান ভ্রমমাণ হকাররা। মনের মাঝে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা যেমন তৈরি করছে তেমনি জীবিকাও যোগাচ্ছে এ পতাকা।
ডিসেম্বর মাসকে কেন্দ্র করে কয়েক ফুট লম্বা বাঁশের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বড় থেকে ছোট আকারের লাল-সবুজের পতাকা সাজিয়ে পথে পথে ঘুরে পতাকা বিক্রি করছেন একদল মানুষ, যাদের আমরা বলি ‘পতাকার ফেরিওয়ালা।’ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ছিপছিপে গড়নের এক যুবক। নাউত্তরের হিম বাতাসে পত পত করে উড়ছিল বাঁশের সঙ্গে বেঁধে রাখা পাঁচ/ছয়টি লাল-সবুজের পতাকা। শুধু পতাকা নয়, মাথায় ও হাতের জন্য লাল-সবুজের ব্যাচ, বাচ্চাদের জন্য প্লাস্টিকের হাতলসহ পতাকাও বিক্রি করছেন তারা। আকার ভেদে একেকটি পতাকা ২০ থেকে ২’শ টাকা আর ব্যাচ বিক্রি হয় ১০ টাকা করে।
পতাকার ফেরিওয়ালা সানোয়ার সাথে কথা হলে সে জানায়, শূন্যে পতাকা উড়তে দেখে অনেকের মনই উতলা হয়ে ওঠে। বিজয় দিবসের আনন্দে তাই অনেকে সেই পতাকা কিনে বাড়ির ছাদ, বারান্দা, গাড়ি, রিকশা ও মোটরসাইকেলের সামনে ওড়াতে চান। এই সুবাদে তার মতো মৌসুমী পতাকা বিক্রেতাদের বাড়তি উপার্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় লাল-সবুজের পতাকা। তার বাড়ি লালমনিরহাটের সদর উপজেলায়। তবে অন্য কোনো কারণে নয়, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কেবল জাতীয় পতাকা বিক্রি করতেই সুন্দরগঞ্জে এসেছেন লালমনিরহাটের এই যুবক। সে সারা বছর অন্য কাজ করে। কিন্তু ডিসেম্বর মাস এলে প্রথম সপ্তাহ থেকেই বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে পতাকা বিক্রি করে। সানোয়ার আরও বলে, ‘দেশের পতাকা বিক্রি করে আমি গর্বিত।’
পতাকা কিনতে আসা এনামুল হক বলেন, এ মাস বিজয়ের মাস। আমরা লাল সবুজ পতাকার জন্য যুদ্ধ করেছি। বিজয়ের সঙ্গে পতাকা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই পতাকা কিনতে এসেছি।
বিজয়ের এমন ক্ষণে পতাকা বিক্রি ও উড়ানোর প্রবণতাকে সাধুবাদ দিয়ে সাংবাদিক শেখ মামুন-উর রশিদ বলেন, এ অবশ্যই সুখের। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে পতাকা যেন সুনির্দিষ্ট মাপে বানানো হয় এবং নিয়ম মেনে উড়ানো হয়।
সুপ্রকাশ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও শিশু সাহিত্যিক কঙ্কন সরকার বলেন, জাতীয় পতাকা একটি জাতির পরিচয়ের প্রতীক। লাল- সবুজের পতাকাটিও অামাদের রক্ত দিয়ে কেনা স্কাধীনতার স্মারক। এই পতাকা সম্মানের, গর্বের, গৌরবের। তাই এর সম্মান রক্ষা করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। পতাকা উড়ানোর পর যথাযথ মর্যাদা সহ রেখে দেওয়াও কর্তব্য।’
এটা বাঙালির পতাকা। এই পতাকা লাখো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। বিজয়ের পুরো মাস জুড়ে বাংলার আকাশে উড়বে লাল-সবুজের পতাকা। সেই চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন সাইজের পতাকার পসরা সাজিয়ে পথে পথে ঘুরছেন সানোয়ারের মত লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা।