সৈয়দপুরে একটি ভবন নির্মাণ কাজের পাইলিংয়ের কারণে ঝুঁকিতে পাশের চারতলা ভবন

0
376
সৈয়দপুরে একটি ভবন নির্মাণ কাজের পাইলিংয়ের কারণে ঝুঁকিতে পাশের চারতলা ভবন

মিজানুর রহমান মিলন
সৈয়দপুর প্রতিনিধি:

নীলফামারীর সৈয়দপুরে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ কাজের পাইলিংয়ের কারণে পাশের একটি চারতলা ভবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। ফলে যে কোন সময় চারতলা ভবনটি ধ্বসে গিয়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ওই ভবনের মালিক শিক্ষক শহীদুজ্জামান শামীম গত মঙ্গলবার সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু গত তিন দিনেও পৌরসভার পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। এতে হুমকির মুখে থাকা চারতলা ভবন মালিকসহ আশপাশের এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিযোগে জানা গেছে, সৈয়দপুর পৌর এলাকার বাঙ্গালীপুর নিজপাড়ার বাসিন্দা মরহুম শফিকুল ইসলামের পুত্র হাজারীহাট স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক খন্দকার শহীদুজ্জামান শামীম পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া সাড়ে ৭ শতক জায়গার মধ্যে তার প্রাপ্ত অংশে (২ দশমিক ৩৩ শতক) নিজের জমানো টাকা এবং ব্যাংক ঋণ নিয়ে একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করেন। ওই চারতলা ভবনের একটি ফ্লাটে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করা ছাড়াও ভাড়ায় দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে বাসা ভাড়ার টাকায় তিনি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে আসছেন। তার চারতলা ভবনের পশ্চিম পাশে জনৈক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী নিয়াজ আহমেদ আশরাফির দুই ছেলে মো. আফতাব আহমেদ ও মো. ইফতেখার আহমেদ জনি জায়গায় কিনে সম্প্রতি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। তারা গত ২০/২৫ দিন ধরে সেখানে এক্সভেটর ও একাধিক শ্যালো মেশিন লাগিয়ে ভূগর্ভস্থের মাটি ও পানি উত্তোলন করে পাইলিংয়ের কাজ করাচ্ছেন। আশপাশের পাকা ভবন কিংবা রাস্তার জন্য কোন রকম নিরাপত্তা (প্রটেকশন) ব্যবস্থাা না করে উন্মুক্তভাবে পাইলিংয়ের কাজ করার কারণে পাশের বাসিন্দা প্রভাষক শামীমের একটি চারতলা ভবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। ইতোমধ্যে ওই চারতলা ভবনের পশ্চিম পাশে জায়গার মালিক আফতাব আহমেদ ও মো. ইফতেখার আহমেদ জনি প্রায় এক শ’ ফুট দীর্ঘ পাকা একটি সীমানা প্রাচীরের সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়েছে। সেই সঙ্গে পাশের চারতলা ভবনের গোড়ার মাটিও ক্রমান্বয়ে সরে পড়ছে। শুধু তাই নয়, বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিং করার জায়গার দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে থাকা পাকা সড়কও হুমকির মুখে পড়েছে। সেখানে খাকা নেসকোর ৪৪০ ভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বৈদ্যূতিক খুঁটি হেলে গেছে ইতোমধ্যে। যে কোন সময় ওই বৈদ্যূতিক খুঁটিটি ধসে পড়ে দূর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও যে জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিং করা হচ্ছে এর ঠিক দক্ষিণ পূর্ব দিকে শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুহম্মদ এনামুল হকের আরো একটি পাঁচতলা ভবন রয়েছে। সেটিও ঝুঁকিতে পড়েছে। এতে ভবন মালিক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

এদিকে, পাশের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণ কাজের জন্য পাইলিংয়ের কারণে ঝুঁকিতে থাকা চারতলা ভবনের বাসিন্দারা ভবন ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বর্তমানে কনকনে শীতে নিজের বাসাবাড়ি ছেড়ে অন্য মানুষের আশ্রয়ে থেকে পরিবারগুলো পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ী আফতাব আহমেদ ও মো. ইফতেখার আহমেদ জনির জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য এক্সভেটর ও একাধিক শ্যালো মেশিন দিয়ে সেখানকার মাটি ও দিয়ে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা। এছাড়াও সেখানে অর্ধশতাধিক নির্মাণ শ্রমিকও বিভিন্ন ধরণের কাজ করছেন। এ সময় সেখানে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের মালিকদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ সময় নাম প্রকাশে এক শ্রমিক জানান, কাজ দেখভালের জন্য একজন সাইট ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন। কিন্তু ওই মুর্হুতে তাকেও সেখানে পাওয়া যায়নি। ঝুঁকিতে থাকা চারতলা ভবন মালিক প্রভাষক শহীদুজ্জামান শামীম জানান, ওই জায়গায় আগে থেকে সুউচ্চ সীমানা প্রাচীর রয়েছে। তার ভেতরে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দিয়ে কাজ শুরু করা হয়। ফলে সেখানে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। এ অবস্থায় তিনি কয়েক দফা সেখানে গিয়ে মালিকের খোঁজ করেন। কিন্তু মালিক কখনই সেখানে ঢু মারতেও আসেন না। তিনি লোকজন দিয়ে কাজ তদারকি করাচ্ছেন। তাঁরপরও তিনি পাইলিং কাজ করার আগে আশপাশের ভবন ও পাকা সড়কের জন্য প্রটেকশন ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের বার বার তাগাদা দেন। কিন্তু তাঁর কথায় তারা কোন রকম কর্ণপাত করেনি। পাশের একটি পাঁচতলা ভবনের মালিক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মুহম্মদ এনামুল হক বলেন, শহরের মধ্যে এমন একটি বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ করার আগে আশপাশের ভবন ও সড়কের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত ছিল। বর্তমানে ভবন নির্মাণ কাজের পাইলিংয়ের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। অথচ তা না করে জায়গার মালিক উন্মুক্তভাবে পাইলিংয়ের কাজ করছেন। এতে করে প্রভাষক শামীম ছাড়াও তাঁর পাঁচতলা ভবনটি মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি এ নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অপরদিকে, ঝুঁকিতে থাকা চারতলা ভবন মালিক প্রভাষক শহীদুজ্জামান শামীম তাঁর কষ্টাজিত অর্থে নির্মিত চারতলা ভবন রক্ষায় সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র ও থানায় পৃথক পৃথক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু গত তিন দিনেও কোন রকম কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে কথার বলার জন্য জায়গার মালিক ও বহুতল ভবন নির্মাণকারী ব্যবসায়ী আফতাব আহমেদ ও মো. ইফতেখার আহমেদ জনির সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আইয়ুব আলীর ০১৭১৫-৫৭২০৯৫ নম্বর মুঠোফোনে কল করলে রিসিভ না করায় তাঁর মন্তব্য জানা যায়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here