খবর৭১ঃ বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে ভাসানচরে নেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক না থাকলেও আশা করা হচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেয়া হবে। প্রত্যাবাসনের সঙ্গে সংশিষ্ট কর্মকর্তা ও কূটনৈতিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা না দিলেও শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রিজওয়ান হায়াতের ভাষ্য, রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে চায়। আর এ নিয়ে তারা প্রস্তুতও রয়েছে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, ‘আমিও শুনেছি সপ্তাহখানেকের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে। আমার কাছে চূড়ান্ত কাগজ না আসা অবদি আমি বলতে পারব না, ঠিক কবে নেয়া হচ্ছে। তবে আমরা প্রস্তুত আছি। রোহিঙ্গারাও যেতে চায়, ওরা এসে বলে ওরা যাবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেলে তাদের (রোহিঙ্গাদের) পাঠাতে পারব।’
করোনা মহামারির শুরুর দিকে সাগর থেকে উদ্ধার করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানো হয়। তারা এখনো সেখানেই আছে এবং ভালো আছে। তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু বিভিন্ন এনজিও ও বিদেশি অনেক দাতা গোষ্ঠীদের চাপ রয়েছে বলে রোহিঙ্গাদের সেখানে নিতে বিলম্ব হচ্ছে বলে সম্প্রতি জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে গত সেপ্টেম্বরে সরকার ‘গো অ্যান্ড সি’ প্রকল্পের অধীনে ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতাকে চার দিনের সফরে ভাসানচর দেখাতে নিয়ে যায়। ভাসানচরে পরিদর্শন করা সেই রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে ঢাকা টাইমসের এই প্রতিবেদকের কথা হলে তারা জানান, তাদের ভাসানচরের সুবিধাদি দেখে ভালো লেগেছে। কিন্তু ফিরে এসে নানা মহল থেকে হুমকি পাওয়াসহ বিভিন্ন এনজিও তাদের নিরুৎসাহিত করছে বলে এ নিয়ে উভয় সংকট দেখছেন তারা।
এদিকে গত ২৩ ও ২৪ সেপ্টেম্বর দুই দিনের সফরে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। সেই প্রতিনিধি দলে থাকা ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজে তিরিঙ্ক ভাসানচরে সরকারের ‘গো অ্যান্ড সি’ প্রকল্পের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া একটি ভালো উদ্যোগ ছিল। রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচরের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে সরকার।
জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস থেকে এই চরের ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ তৈরি করেছে। এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য সেখানে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আগে থেকে অবস্থান করছে চার লাখের মতো। বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি করলেও মিয়ানমারের অনাগ্রহের কারণে এই চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। পরপর দুবার প্রত্যাবাসনের খুব কাছাকাছি গিয়েও একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে পাঠানো যায়নি মিয়ানমারের কারণে।