খবর৭১ঃ শীত শুরু হতে না হতেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে সরকার। বার বার বলার পরেও যারা মাস্ক পরতে অনীহা দেখিয়ে আসছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের ‘কঠিন সাজা দেওয়া হবে’ বলে ইতোমধ্যে হুঁশিয়ার করেছে সরকার।
আবার লকডাউনে না গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক বলে মানছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আগেরবারের লকডাউনের অভিজ্ঞতার আলোকে তারা বলছেন, সেবার পুরোপুরি লকডাউন করা সম্ভব হয়নি। সামনেও সম্ভব হবে না। ফলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই মানুষকে সচেতন করতে হবে, পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহারসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে বাধ্য করতে হবে।
গেল মার্চে দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্তের পর প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। লকডাউন আর চলাফেরায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বেশ কিছু পদক্ষেপে দেশে মাঝে কিছুদিন দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দেড় হাজারের কাছাকাছি থাকলেও এখন তা আবার বেড়ে দুই হাজারের মতো থাকছে। সবমিলিয়ে দেশে গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪ লাখ ৫১ হাজার ৯৯০ জনে পৌঁছে গেছে। মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৪৮ জনে।
গতকাল সচিবালয়ে এক ব্রিফিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারের কঠোর হওয়ার আভাস দেন। আবার লকডাউন দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, পুরো লকডাউন আসলে সম্ভব নয়, পাকিস্তান তো পারেনি, ভারত পারছে না। রোজ রোজ সংক্রমণ বাড়ছে, কাজেই এ বিষয়ে সরকারের প্রস্তুতি আছে, প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি মনিটর করছেন। কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এসময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রী জানান, মাস্ক ব্যবহারটা একেবারেই বাধ্যতামূলক করবে। যারা মাস্ক পড়বে না, জরিমানা দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে খুবই সিরিয়াস। গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে মাস্ক ব্যবহার না করলে প্রয়োজনে জরিমানা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সিদ্ধান্ত এমনও হতে পারে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে যদি বিধিনিষেধ আরোপ করতে হয় সেটাও করতে হবে। কড়াকড়ড়িটা থাকবে সিদ্ধান্তে। ফ্রি-স্টাইল, মানে মাস্ক না লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো, এ শহরের যে প্রবণতা… এখন অবশ্য কিছু কিছু পড়ছে। মফস্বলে যে একদম মানে না। এসব ব্যাপারে কড়াকড়ি হচ্ছে।
এলাকাভিত্তিক লকডাউনের চিন্তা সরকারের রয়েছে কিনা প্রশ্নে কাদের বলেন, এ রকম টাইমটেবল না। এখন দেখছি যে কোন দিকে যাচ্ছে। গতিপ্রকৃতি দেখে এর পরে প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মাস্ক বাধ্যতামূলক ব্যবহার করবে এটা এখনকার সিদ্ধান্ত।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
লকডাউনে না গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানাটা সব থেকে জরুরি। আমরা লকডাউন কথাটা আর বলতে চাচ্ছি না।’
তিনি বলেন, ‘কারণ শুধু আমাদের দেশেই না, অনেক উন্নত দেশও পুরোপুরি লকডাউন বলতে যা বোঝায় তা করতে পারেনি। সেক্ষেত্রে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে যে কঠোর হওয়ার কথা ভাবছে সেটা ঠিক আছে। আর এখন অভিযানের সঙ্গে মানুষকে বারবার ব্যবহার করা যায় এমন মাস্ক বেশি করে দিতে হবে।’
করোনার রোগী বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ড, নজরুল বলেন, ‘সরকারকে আইসিইউগুলোর কি অবস্থা সেদিকে নজর দিতে হবে। কারণ হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সংকট। জেলা পর্যায়ে আইসিইউ বেড করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল তা খুব একটা কাজে আসেনি। এটা বাড়াতে না পারলে ভয়াবহ হবে।’
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদও সরকারের এমন পদক্ষেপ যৌক্তিক বলে মনে করেন। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘এমন সিদ্ধান্ত একদিকে ভালো। কারণ আগেরবারের লকডাউনে খুব লাভ হয়নি। লকডাউন যেভাবে হওয়ার কথা সেভাবে হয়নি। সরকারও পারেনি। সামনেও পারবে না। ফলে অর্থনীতি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’
এ স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর তথ্য বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। পরিসংখ্যান নিয়ে লুকোচুরি করা যাবে না। এতে যারা করোনা পরিস্থিতিকে অবহেলা করছে তারা সচেতন হবে। এজন্য গণমাধ্যম, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীদের কাজে লাগাতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানোর পাশাপাশি বারবার ব্যবহারযোগ্য মাস্ক দিতে হবে। এরপরও না পরলে জরিমানা করতে হবে।’