বিদেশ সফরে যাবেন ৬২ কর্মকর্তা

0
358
চরভদ্রাসনের উপজেলা নির্বাচন বাতিল

খবর৭১ঃ

উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ‘নানা ছুঁতোয়’ বিদেশ সফর চলছেই। ঘাস চাষ শিখতে ৩২ কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের সমালোচনার ঝড় থামতে না থামতেই এবার জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য প্রশিক্ষণের নামে ৬২ কর্মকর্তার বিদেশ সফরের আয়োজন করা হয়েছে। এজন্য প্রথমদিকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল ৫ কোটি টাকা। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির মুখে ৪ কোটি টাকা কমিয়ে করা হয়েছে এক কোটি টাকা। এতে প্রত্যেক কর্মকর্তার জন্য ব্যয় হবে প্রায় এক লাখ ৬১ হাজার টাকা করে। তবে এই বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

এছাড়া পূর্ব অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে প্রকল্প প্রস্তাব। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (্আইডিইএ) দ্বিতীয় পর্যায়’ প্রকল্পে ঘটেছে এমন ঘটনা। সেই সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পরামর্শকের পকেটে যাবে ২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ২০টি অডিও-ভিডিও বা চলচ্চিত্র নির্মাণে চাওয়া হয়েছে এক কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের জন্যও রয়েছে ২ কোটি টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে প্রকল্পটি। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘যেহেতু এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলছে, সেহেতু এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের আরও কঠোর ও সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে এক ধরনের বদনাম হয়ে গেছে। এই বদনাম ঘোচাতে কঠোরতার বিকল্প নেই। তাছাড়া পরিকল্পনা কমিশন জানে কোথায় কোন খাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ধরা হয়। এ প্রকল্পে যদি একান্তই বিদেশ প্রশিক্ষণে যেতেই হয়, তাহলে ২ জন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে ৬০ জনকে প্রশিক্ষণ দিতে পারতেন। এতে সরকারি অর্থের অপচয় রোধ হতো।’

জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, মোডালিটি এবং সার্ভার ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হলে বৈদেশিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা সেজন্যই এই ব্যবস্থা রেখেছি। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বাটন মোবাইলের পর যখন টাচ মোবাইল আসে তখন নিশ্চয়ই আমরা কারও না কারও কাছে শিখেছি- সেটি কীভাবে চালাতে হয়। সে রকম প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে।

লেটেস্ট আপডেন জানতেই কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়নি। কেননা আইডিইএ-১ প্রকল্পের ব্যাপক সাফল্য রয়েছে। প্রায় ২০০-৩০০ শতাংশ সফল হয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ৪টি প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেয়া। কিন্তু এখন তো ১৩৭টি মূল প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেয়া হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শাখা ধরলে অনেক হবে। এটি এখন গণমানুষের প্রকল্প। তাই এর ধারাবাহিকতা রাখতেই দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি আমার নজরে পড়েনি। প্রকল্পটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছিল কোভিডের আগে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে। তারপরও অনেক টাকা কমানো হয়েছে। এখন খেয়াল করলে হয়তো পুরোটাই কেটে দিতাম। তিনি জানান, আগে ফ্রান্স থেকে আইডি কার্ড আমদানি করা হয়েছিল বেশি খরচে। এখন দেশেই এই কার্ড কম দামে তৈরি করা হবে। এর মান যদি ভালো হয় তাহলে আমরাই আগামীতে হয়তো কার্ড রফতানি করতে পারব। এটি একটি আশার কথা।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। একনেকে অনুমোদন পেলে চলতি অর্থবছর থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্প গ্রহণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) ডাটাবেজকে সম্প্রসারিত করা হবে। এর মাধ্যমে একটি আধুনিক, যুগোপযোগী, সুরক্ষিত ও আদর্শ ডেটাবেজে রূপান্তরের মাধ্যমে দেশের সব নাগরিককে ইউনিক আইডির আওতায় নিয়ে আসা হবে। সেই সঙ্গে নাগরিক সেবায় স্বচ্ছতা আনয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি প্রচেষ্টাকে জোরদার করা হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে সব নাগরিককে বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া এবং স্বচ্ছ ও নির্ভুল ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নও করা হবে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ৫০ কোটি টাকার বেশি উন্নয়ন প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেখানে এ প্রকল্পটি তৈরিতে কোনোরকম সমীক্ষাই করা হয়নি। একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্প সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ‘প্রিপারেশন অব ইলেক্টরাল রোল উইথ ফটোগ্রাফ অ্যান্ড ফ্যাসিলিটেটিং দ্য ইস্যুয়েন্স অব ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড’ এবং চলমান ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ)’ প্রকল্প থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও লব্ধজ্ঞান কাজে লাগিয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে সমজাতীয় কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। পাশাপাশি সব কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ নিশ্চিত করা হবে। তাই পৃথক কোনো প্রি-এপ্রেইজাল, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বা প্রাক-বিনিয়োগ সমীক্ষা সম্পন্ন করা হয়নি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ৩১ অক্টোবর প্রথমবার পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সভা।

ওই সভায় দেয়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুপারিশ হল- বৈদেশিক স্টাডি ট্যুরের ব্যয় ৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে এক কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের জন্য ৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করতে হবে।

এছাড়া লিগ্যাল পরামর্শক একজন, প্রকিউরমেন্ট পরামর্শক একজন (জুনিয়র), পারসোনালাইজেশন পরামর্শক একজন (জুনিয়র), মিডলওয়্যার পরামর্শক একজন (জুনিয়র), পিকেআই পরামর্শক একজন (জুনিয়র), ক্রিডেনশিয়াল ম্যানেজমেন্ট পরামর্শক একজন (জুনিয়র) প্রকল্প থেকে বাদ দিতে হবে। সেই সঙ্গে সিনিয়র ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটরের স্থলে জুনিয়র একজনের সংস্থান রাখা এবং অন্য পরামর্শকদের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, কার্যপরিধি, সম্মানী ও মেয়াদকাল ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংযোজন করতে হবে।

এই সুপারিশ মেনে নির্বাচন কমিশন থেকে ৮৭৬ জনমাস পরামর্শক সেবার জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২৮ কোটি ৭০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। সুপারিশে আরও বলা হয়, ভবিষ্যতে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের এই রুটিন কার্যক্রম প্রকল্পের মাধ্যমে না করে রাজস্ব খাত থেকে বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকল্পের সব পর্যায়ে আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণ করে যথাযথ আর্থিক কৃচ্ছ্র ও স্বচ্ছতা রক্ষার বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here