খবর৭১ঃ রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতালের মর্গের ডোমের সহকারীকে হিসেবে কাজ করে মুন্না। তার দায়িত্ব ছিল রাতে মর্গে লাশ পাহারা দেয়া। কিন্তু মধ্যরাতে সে মেতে উঠতো এক বীভৎস কর্মকাণ্ডে। আত্মহত্যার মতো অপঘাতে নিহত তরুণীদের মৃতদেহের সঙ্গে সে বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হতো। সবার অগোচরে দিনের পর দিন এই জঘন্য কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে মুন্না ভগত (২০) নামের এই যুবক।
লাশ ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাকে গ্রেফতার করেছে। এরপরই বেরিয়ে আসে এই কদর্য ঘটনার খবর। উল্লেখ্য, মুন্না সরকারি ওই হাসপাতালের মর্গের প্রধান ডোম জতন কুমার লালের ভাগ্নে। শুক্রবার সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সিআইডি জানিয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে সংস্থাটি দেশের বিভিন্নস্থানে ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় নিহতদের আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা ও প্রোফাইল তৈরি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের মার্চ মাস থেকে একটি সরকারি হাসপাতাল থেকে আসা কিছু আলামতের মধ্যে এইভিএস (হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব) বা পুরুষের বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় সিআইডির কর্মকর্তারা আসল ঘটনা জানতে শুরু করেন তদন্ত। রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও কাফরুল থানার কয়েকটি ঘটনার পরে পাওয়া আলামতের ডিএনএ গবেষণা করে সবগুলোতে একই ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া যায়।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ডোমের সহযোগী মুন্না ভগত দুই-তিন বছর ধরে এই কাজ করছে। রাতে সে মর্গেই ঘুমাতো। রাতে ওই হাসপাতালে আসা লাশ সে পাহারা দিতো। রাতে কোনো তরুণীর লাশ আসলেই সে মেতে উঠতো বিকৃত যৌনাচারে। আত্মহত্যাকারী ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী মেয়েরাই ছিল মুন্নার বিকৃতির লক্ষ্য। মুন্না ওই হাসপাতালের স্টাফ না হয়েও মামার সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডি আরও জানায়, অধিকতর তদন্তে আত্মহত্যাকারীদের লাশের ময়নাতদন্তের আগে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়। প্রতিটি ধর্ষণই রাতের নিরিবিলি সময়ে হতো। তদন্তের এক পর্যায়ে মুন্নার ডিএনএর সঙ্গে সিআইডির প্রোফাইলে থাকা লাশের ডিএনএর নমুনা পাওয়া যায়। পরে বৃহস্পতিবার রাতে ওই হাসপাতালের মর্গ থেকে মুন্নাকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
আরো পড়ুন : বদলে গেলো অপরাজেয় সেই খুকির জীবন
ইন্টারনেট ঘেটে দেখা যায়, মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করা একটি মানসিক রোগ। এই ধরনের রোগকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় নেক্রোফিলিয়া বলা হয়ে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ৫ মরদেহে একই ব্যক্তির আলামতের উপস্থিতি মিলে যাওয়ার পর ঘটনার তদন্তের শুরুতে আমরা সিরিয়াল কিলার কিংবা সিরিয়াল রেপিস্টদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে ধরে তদন্ত শুরু করি। তবে সুরতহাল কিংবা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মরদেহে আঘাতের চিহ্ন না পাওয়ায় তদন্তে মোড় আসে। এরপরই মর্গে মৃত নারীদের ধর্ষণ করা হতে পারে সন্দেহে তদন্ত শুরু করে সিআইডির তদন্ত টিম। ডিএনএ ল্যাবে পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত পাঁচটি মরদেহে গ্রেফতারে মুন্নার আলামত মিলেছে। আর প্রত্যেকটি মরদেহের বয়স ১২ থেকে ২০। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে মুন্না।