সুদীপ্ত শামীম, স্টাফ রিপোর্টারঃ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ, অর্থ হাতিয়ে নেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটি কাপাসিয়া ২ নং আশ্রয়ন প্রকল্পে স্বজনপ্রীতি ও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ঘর বরাদ্দ দিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান। স্থানীয়দের দেয়া তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে ভাটি কাপাসিয়ার ২নং আশ্রয়ন প্রকল্প সম্পর্কে জানা যায়, ভাটি কাপাসিয়া ২নং আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১’শ টি ঘর বরাদ্দ রয়েছে। অথচ সেখানে বসবাস ৫০টি পরিবারের। বাকি ৫০টি ঘরের ৪৯টি ঘরে মানুষ তো দূরে থাক নেই কোন আসবাবপত্র, ঘরগুলো জনশুন্য ও তালাবদ্ধ। বাকি ১টি ঘরে মানুষ নয় বরং বসবাস করে গরু, ছাগল, মহিষ। এই আশ্রয়ন প্রকল্পে চেয়ারম্যানের স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কেউ পেয়েছেন ঘর কেউবা হয়েছে যাযাবর। অপরদিকে চেয়ারম্যান এবং তার ছোট ভাই আয়নাল হক একাধিক লোকের কাছে ঘর বরাদ্দ সহ বিভিন্ন ভাতা কার্ড করে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন নগদ টাকা তবে দেয়নি তাদের ঘর।
অন্যদিকে, ওই ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য সাজেদা বেগম তার শ্বাশুড়ি সায়েরা বেওয়ার নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিয়েছেন ঘর বরাদ্দ। অথচ সেই মহিলা ইউপি সদস্য’র রয়েছে দ্বিতল ভবন বাড়ী। আশ্রয়ন প্রকল্পের সেই ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন হতদরিদ্র ও গৃহহীন মইনুল হোসেন ও আলপনা বেগম দম্পতি।
স্থানীয় সুত্রে আরো জানা যায়, ভাটি কাপাসিয়ায় এমন ও অসহায় গরীব মানুষের বসবাস আছে যাদের ভাঙা ঘরে অনায়াসে শিয়াল কুকুর যাতায়াত করে এমনকি বৃষ্টি এলে ঘরের ভিতরে পানি আসে। অনেকেই আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রবেশের রাস্তায় পরিবার পরিজন নিয়ে বাস করে ছোট্ট খুপরি ঘরে। মোটা অংকের টাকা দিতে না পারায় দয়া হয়নি চেয়ারম্যান, মেম্বারের। তাই তারা পায়নি সরকারের দেয়া আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর।
ভুক্তভোগী কয়েকজন জানান, তাদের কারো কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। আবার অনেকের কাছ থেকে ২০ হাজার, ১৫ হাজার, ১২ হাজার, ৮ হাজার, ৫ হাজার করে টাকা নিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন সরকার।
ভুক্তভোগী হাছেন আলী বলেন, “চেরম্যান (চেয়ারম্যান) মোর কাছে ট্যাকা নিয়ে ঘরও দেয়না, আর এলা ট্যাকাও দেয়না।”
শরিফুল ইসলাম বলেন, “মোক ঘর দিবার চায়য়া চেরম্যান ২০ হাজার ট্যাকা নিছে। ঘর তো দুরোত থাউক এলা ট্যাকা চাইলেও তাক ফেরত দেয়না।”
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ফজলার রহমান অভিযোগ করে বলেন, আমি একজন যুদ্ধহত মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু এই জালাল চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধাদের কোন সম্মান দেয়না। অনেক অপমান ও অসন্মান করেন যেন তার কাছে আমাদের কোন দাম নাই। আশ্রয়ন প্রকল্পে সে হতদরিদ্রদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পরেও ঘর দেয়নি। অন্য ইউনিয়নের ভোটারদেরকে দিয়েছে আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ।
এসব ঘর বরাদ্দের বিষয়ে একাধিক বার কথা বলতে গেলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দীন সরকার ও মহিলা সদস্য সাজেদা বেগম কথা বলতে রাজি হননি বরং তারা সাংবাদিকদেরকে হয়রানি করেছেন এবং বলেছেন কি করতে পারেন করেন দেখবো।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাকিল আহমেদ বলেন, “খুব শীঘ্রই ভাটি কাপাসিয়া আশ্রয়ন প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের মাঝে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে।”
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাজী লুতফুল হাসান বলেন, “তদন্ত করতে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও যদি ঘর বরাদ্দে টাকা নেয়ার বিষয়টি প্রমানিত হয় বা কোন অনিয়ম দূর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”