পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় হাজী সেলিমের দখলে থাকা জমি রোববার মুক্ত করেন স্থানীয় কৃষকরা ইউসুফ মিনা, আনোয়ার মিনা, শহিদুল মিনা, দেলোয়ার মিনা, আবুল কালাম, ফুলবানু, আব্দুল মান্নান, সৈয়দ আহসান উদ্দিন, ইসমাইল গাজী, ফিরোজা বেগম, মোজাম্মেল হাওলাদার, কামরুল ইসলাম- পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের টিয়াখালীর রজপাড়া গ্রামের এই ১২ কৃষক পরিবারের প্রায় পাঁচ একর জমি দখলে রেখেছিল ঢাকার এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের মালিকানাধীন মদিনা গ্রুপ। মিনা বাড়ি-সংলগ্ন চার লেন সড়কের পাশে অন্তত পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের এ জমি জাল দলিলের মাধ্যমে দখল করার পর রিংবাঁধ দিয়ে বালু ফেলার কাজও শুরু হয়। মদিনা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মদিনা ফিলিং সার্ভিসের নামে দখল হওয়া এ জমি ফেরত পেতে স্থানীয় প্রশাসনে বারবার ধরনা দিয়েছিলেন কৃষকরা। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। এ নিয়ে গত বছরের ২৪ মে কলাপাড়া প্রেস ক্লাবে কৃষকরা সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। সম্প্রতি হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় কারাগারে গেলে চাপে পড়ে হাজী সেলিমের পরিবার। এই সুযোগে নিজেরাই সাহসী হয়ে জমি উদ্ধারে নেমে পড়ে ওই ১২ কৃষক পরিবার। দুদিন ধরে এক্সক্যাভেটর দিয়ে রিংবাঁধ কেটে জমির মালিকানা ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন তারা। কৃষকরা জানিয়েছেন, টিয়াখালী ইউনিয়নের রজপাড়া মৌজার এসএ ৯০, ১১২, ১১৩, ১১৫, ১২২ খতিয়ানের এই জমি ৪০-৫০ বছর ধরে তারা ভোগদখল ও চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। ২০১৬ সালের মে মাসে হাজী সেলিমের মদিনা গ্রুপের লোকজন স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে জোর করে তাদের প্রায় পাঁচ একর কৃষিজমি দখল করে নিয়ে বালু ভরাট শুরু করে। এ জন্য গত বছর জমির চারপাশে বাঁধ ও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়। জমি উদ্ধারে কৃষকরা একজোট হলেও মদিনা গ্রুপের ভাড়াটে সন্ত্রাসী এবং প্রশাসনে হাজী সেলিমের প্রভাবের কারণে অসহায় কৃষকরা পিছু হটেন।
গতকাল রোববার সরেজিমন গিয়ে কথা হয় জমির অন্যতম মালিক সৈয়দ আহসান পাভেলের সঙ্গে। তিনি জানান, তার এক একর ৪৩ শতক জমি দখল করে নিয়েছিল মদিনা গ্রুপ, যা শনিবার সকাল থেকে পুনরুদ্ধার শুরু করেছেন তিনি। দু-এক দিনের মধ্যে দখলমুক্ত করার কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, প্রশাসনে ধরনা দিয়েও কোনো সাহায্য পাইনি। জমির মালিক সবাই মিলে ২০১৯ সালের ২৪ মে কলাপাড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছি। তারপরও আমাদের বাপ-দাদার জমি ফিরিয়ে দিতে কেউ এগিয়ে আসেনি।
জমির আরেক মালিক ইউসুফ মিনা বলেন, জমি দখল নিয়েও তারা ক্ষান্ত হয়নি। প্রতিবাদ করায় ২০১৮ সালে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে আমার বাড়িতে ডাকাতি করা হয়। ওই সময় ডাকাতরা আমার স্ত্রী, পুত্রবধূ ও নাতনিকে মারধর করে। বাড়িতে থাকা নগদ এক লাখ টাকা, তিনটি মোবাইল ফোন ও বারো আনা ওজনের একটি স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়। ইউসুফ মিনা জানান, ওই রাতে বাড়িতে না থাকায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। সেই ঘটনার পর থেকে তিনি রাতে বাড়িতে থাকেন না।