খবর৭১ঃ বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুতে ৩৫তম স্প্যান ‘টু-বি’ বসানোর ক্ষেত্রে নদীতে সৃষ্ট নাব্য সংকট ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নিরসন করা হয়েছে। বর্তমানে নির্ধারিত পিয়ারের কাছে নদীর গভীরতা ভাসমান ক্রেন চলাচলের উপযোগী। ফলে ৩৫তম স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। আগামীকাল শনিবার সেতুর মাওয়া প্রান্তে ৮ ও ৯নং পিয়ারে বসানো হতে পারে স্প্যানটি। এতে দৃশ্যমান হতে চলেছে সেতুর পাঁচ হাজার ২৫০ মিটার অংশ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের ঢাকা টাইমসকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, পরিকল্পনা থাকলেও নদীতে নাব্য সংকটের কারণে শুক্রবার বসানো যায়নি স্প্যানটি। দিনভর ড্রেজিং করে নাব্য সমস্যা নিরসন করা হয়েছে। স্প্যান বসানোর জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের কাছ থেকে স্প্যানবাহী নির্ধারিত পিয়ার ৮-৯ এর অবিমুখে রওনা হবে। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে পিয়ার দুটির দূরত্ব ৯০০ মিটারের কিছু বেশি। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে পিয়ারের কাছে ক্রেন পৌঁছাতে ২০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। কারিগরি জটিলতা অথবা আবহাওয়া প্রতিকূল না হলে দুপুরের মধ্যে স্প্যানটি বসানোর কাজ শেষ করা হবে।
৩৫তম স্প্যানসহ সেতুতে বাকি থাকা সাতটি স্প্যান মাওয়া প্রান্তে বসানো হবে। ইতিমধ্যেই জাজিরা প্রান্তে সবগুলো স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৩৫তম স্প্যান বসানো হলে আগামী ৪ নভেম্বর সেতুর ২ ও ৩নং পিয়ারে ৩৬তম স্প্যান ‘১-বি’, ১১ নভেম্বর ৯ ও ১০নং পিয়ারে ৩৭তম স্প্যান ‘২-সি’, ১৬ নভেম্বর ১ ও ২নং পিয়ারে ৩৮তম স্প্যান ‘১-এ’, ২৩ নভেম্বর ১০ ও ১১নং পিয়ারে ৩৯তম স্প্যান ‘২-ডি’, ২ ডিসেম্বর ১১ ও ১২নং পিয়ারে ৪০তম স্প্যান ‘২-ই’ ও ১০ ডিসেম্বর ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ারে ৪১তম স্প্যান স্প্যান ‘২-এফ’ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া সেতুর দুই হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে এক হাজার ৪১টির বেশি রোড স্ল্যাব বসানো হয়েছে। আর দুই হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে এখন পর্যন্ত বসানো হয়েছে এক হাজার ৫০০টির বেশি।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয় ৩৪টি স্প্যান। এতে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর পাঁচ হাজার ২৫০ মিটার অংশ।
৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে সব কটি পিয়ার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।
৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আগামী ২০২২ সালেই খুলে দেয়ার কথা রয়েছে।