খবর৭১ঃ
গেজেটভুক্ত প্রায় ৫৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সব ধরনের তথ্য পুনরায় যাচাই-বাছাই করা হবে। এসব মুক্তিযোদ্ধা বিএনপি ও আওয়ামী লীগ শাসনামলে (২০০২-২০১৪) তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন।
কিন্তু সেই সময় ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০০২’ অনুসরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই তালিকার মুক্তিযোদ্ধাদের নাম সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলা ও মহানগর কমিটির কাছে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পাঠানো হবে। তবে কমিটির কাছে মুক্তিযোদ্ধার স্বপক্ষে তথ্যপ্রমাণাদি উপস্থাপন করতে পারলে তার গেজেট বহাল থাকবে।
অন্যথায় গেজেট-সনদ বাতিলের পাশাপাশি ভাতাও বন্ধ হবে। তবে যাদের নাম লাল মুক্তিবার্তা ও ভারতীয় গেরিলা বাহিনীর করা তালিকায় রয়েছে, তারা পুনঃযাচাইয়ের বাইরে থাকবেন।
৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৬৯তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
প্রসঙ্গত, ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল-এই সময়ের মধ্যে বিএনপি আমলে ৪৪ হাজার এবং আওয়ামী লীগ আমলে ১১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হয়েছেন।
স্বাধীনতার এত বছর পর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা চূড়ান্ত না হলেও এ মুহূর্তে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কমবেশি ২ লাখ ৩১ হাজার ৩৮৫।
এর মধ্যে ভাতা পাচ্ছেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৩ জন। তাদের প্রত্যেককে প্রতিমাসে ১২ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা দেয়া হয়।
উল্লিখিত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘বিদ্যমান জামুকা আইন লঙ্ঘন করে যাদের মুক্তিযোদ্ধার গেজেট জারি করা হয়েছে তাদের তথ্য পুনরায় যাচাই-বাছাই করা হবে। ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধার গেজেট করা হয়েছে। আমরা সেগুলো জেলা-উপজেলা ও মহানগর কমিটির মাধ্যমে পুনরায় যাচাই করব। যারা মুক্তিযোদ্ধার স্বপক্ষে তথ্য-উপাত্ত হাজির করতে পারবেন, তাদের গেজেট বহাল থাকবে। আর যারা প্রমাণ করতে পারবেন না, তাদের গেজেট ও সনদ বাতিল করা হবে।’
এই সময়ের মধ্যে কতজনের গেজেট হয়েছিল-জানতে চাইলে মন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান দিতে পারেননি। তবে তিনি বলেন, ‘এ সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার হতে পারে। কিন্তু সবই নিয়মবহির্ভূতভাবে গেজেট জারি করা হয়নি। এর মধ্যে লাল মুক্তিবার্তার ও ভারতীয় গেরিলা বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছেন। তবে বেশির ভাগই নিয়মকানুন না মেনেই গেজেট হয়েছে। এর সংখ্যা ৩০ হাজারের উপরে হতে পারে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জামুকার ৬৯তম সভায় বলা হয়, ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে জামুকা আইন লঙ্ঘন করে মুক্তিযোদ্ধার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
ওই গেজেট প্রকাশকালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২ অনুসরণ করা হয়নি। কোনো মুক্তিযোদ্ধা প্রার্থীর তথ্য সংবলিত আবেদন প্রথমে নিজ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে যাচাই হয়।
উপজেলা কমিটির সুপারিশে প্রাথমিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হলে সে তালিকা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) পাঠানো হয়। জামুকার তদন্তের পর তা সভায় উপস্থাপন করা হয়।
জামুকার সভায় অনুমোদন দেয়ার পর গেজেট প্রকাশের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করে। এসব নিয়ম অনুসরণ না করেই মন্ত্রণালয় সরাসরি ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে গেজেট প্রকাশ করেছে, যা জামুকা আইন ২০০২ এর পরিপন্থী।
এই সময়ের মধ্যে আইনবহির্ভূতভাবে যেসব গেজেট প্রকাশ হয়েছে, ওই সব গেজেট উপজেলা/জেলা/মহানগর মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে নির্ধারিত নির্দেশিকা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, এসব যাচাই-বাছাইয়ের আওতামুক্ত থাকবে বেশকিছু ক্যাটাগরির মুক্তিযোদ্ধারা। এর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধার ভারতীয় তালিকা, কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক প্রণীত শহীদ বেসামরিক গেজেট, সশস্ত্র বাহিনী শহীদ গেজেট, বিজিবির শহীদ গেজেট, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার গেজেট, খেতাবপ্রাপ্তদের গেজেট, মুজিবনগর, বিসিএস ধারণাগত জ্যেষ্ঠতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিসিএস, সেনা, বিমান, নৌ, নৌ-কমান্ডো, পুলিশ, আনসার, স্বাধীন বাংলা বেতার শব্দসৈনিক, বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনী, লাল মুক্তিবার্তা, লাল মুক্তিবার্তায় স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা, মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় তালিকা (সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী), ভারতীয় তালিকা (পদ্মা), ভারতীয় তালিকা (মেঘনা), যুদ্ধাহত পঙ্গু বিজিবি, যুদ্ধাহত বিজিবি, সেক্টর অনুযায়ী ভারতীয় তালিকা, বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে দায়িত্বপালনকারী ও যুদ্ধাহত সেনা গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধা।