খবর৭১ঃ সাতক্ষীরায় একই পরিবারের চারজনকে হত্যার ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। খাওয়া নিয়ে ভাবি সাবিনা খাতুনের খোঁটা দেয়া এবং টিভি দেখায় বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে বলে বড়ভাই শাহীনুরের গালমন্দের কারণেই হত্যার পরিকল্পনা করেন ছোটভাই রায়হানুল ইসলাম। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি হত্যার ফন্দি আঁটেন।
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের চার সদস্যকে কুপিয়ে হত্যায় রায়হানুল ইসলাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার বিকালে সাতক্ষীরা সিআইডি অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির ঢাকা অফিসের অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক। এ সময় সাতক্ষীরা সিআইডি পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, রায়হানুল বেকার ছিলেন। ঘটনার দিন ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় খাওয়ার খোঁটা দিয়ে তাকে ব্যাপক গালমন্দ করেন ভাবি সাবিনা খাতুন। তখনই তিনি ভাবিকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটেন। রাতে টিভি দেখার সময় বিদ্যুৎ বিল বেশি হবে বলে তাকে বকা দেন বড় ভাই শাহিনুর। এসময় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে তাকেও হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরে রায়হানুল কোমল পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ভাই, ভাবি এবং ভাতিজা-ভাতিজিকে খাওয়ান। রাতে দরজা না লাগিয়ে বাইরের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে শাহিনুরসহ পরিবারের সবাই ঘুমাতে যান। ১৫ অক্টোবর ভোর চারটার দিকে রায়হানুল গাছ বেয়ে চিলেকোটা দিয়ে ঘরে ঢুকে প্রথমে ঘুমন্ত ভাই শাহিনুরকে এবং পরে ভাবিকে চাপাতি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করেন। ছেলে সিয়াম ও মেয়ে তাসনিম জেগে গেলে তাদেরও হত্যা করেন রায়হানুল। পরে তিনি চাপাতি পুকুরে ফেলে গোসল করে ঘুমাতে যান।
রায়হানুলের স্বীকারোক্তিতে বুধবার দুপুরে হেলাতলা চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছ থেকে লিজ নেয়া বাড়ির পাশের পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি ও তার পরিহিত তোয়ালে উদ্ধার করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক অমল কুমার রায় জানান, আসামি রায়হানুল বুধবার তার ভাইসহ চারজনকে একে একে হত্যার কথা স্বীকার করে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিলাস মণ্ডলের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তবে এই মামলায় গ্রেপ্তার পুলিশের সোর্স আব্দুল মালেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানিয়েছে সিআইডি।
গত ১৫ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ভোররাতে কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে মৎস্য হ্যাচারি মালিক শাহিনুর, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, ছেলে সিয়াম হোসেন মাহী ও মেয়ে তাসনিম সুলতানার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ঘাতকদের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যায় তাদের চার মাসের শিশু কন্যা মারিয়া সুলতানা।
এ ঘটনায় শাহিনুরের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদী হয়ে কারও নাম উল্লেখ না করে কলারোয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। সে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডিকে।
হত্যার দিনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় নিহতের ছোটভাই রায়হানুলকে। পরদিন রায়হানুলকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে রায়হানুলকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে এনে সোমবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সিআইডি।বুধবার তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন।