খবর৭১ঃ গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আবারও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চাই এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারে তাদের প্রত্যাবাসনে সহায়তা করা।’
ঢাকায় সফররত মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগান বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই আহ্বান জানান।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
যুক্তরাষ্ট দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান চায় উল্লেখ করে স্টিফেন ই. বিগান বলেন, ‘আমরা এই ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখব।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন যে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১১ লাখেরও বেশি লোক বাংলাদেশে রয়েছে। এটি আমাদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা। সমস্যাটি মিয়ানমার তৈরি করেছে এবং আমরা তাদের সাথে সংলাপ করছি। তাদের উচিত তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়া। শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু একটি সামাজিক সমস্যা এবং মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত নাগরিক কক্সবাজারে আশ্রয় শিবিরগুলোতে বাস করছে। কিছু মহল অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত হতে তাদেরকে ভুল পথে চালিত করতে পারে। সুতরাং, আমরা অবিলম্বে তাদেরকে স্বদেশে প্রত্যাবাসন করাতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমস্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে আত্মগোপনে থাকা সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেন। এ বিষয়ে স্টিফেন ই বিগান জানান, মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা সেবা আবার চালু করা হবে বলে জানান বিগান।
মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘মার্কিন সরকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে।’
তিনি যুক্তরাষ্ট্রে করোনভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাকালে বলেন, মারাত্মক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সেখানে দুই লাখেরও বেশি লোক মারা গেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভ্যাকসিন সহজলভ্য করার কাছাকাছি এসে গেছি এবং আশা করি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে এ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।’
স্টিফেন ই বিগান বলেন, ‘বেশ কয়েকটি মার্কিন কোম্পানি ভ্যাকসিন তৈরি করছে এবং আগামী বছর থেকে ব্যাপক হারে টিকাদান শুরু হবে।’
মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা আরো জোরদার করতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ-বিদেশ থেকে আরও বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তার সরকার দেশজুড়ে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে।
শেখ হাসিনা মহামারির মধ্যে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার পাশাপাশি কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে তার সরকারের পদক্ষেপগুলোও সংক্ষেপে তুলে ধরেন।