এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ছয় ঘণ্টার ভোগান্তি

0
441
এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ছয় ঘণ্টার ভোগান্তি

খবর৭১ঃ সচরাচর বৃষ্টি একটা স্নিগ্ধ-স্নাত আবহ তৈরি করলেও এই বৃষ্টির পানিতেই রাজধানীর বাসিন্দাদের ভুগতে হয়। কারণ বৃষ্টি হলেই পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার সড়ক। জলাবদ্ধতার জন্য যান চলাচলে বিপত্তির কারণে লেগে যায় যানজট। এমনকি পায়ে হেঁটে কোথাও যাওয়ারই জো থাকে না নগরবাসীর।

গতকাল দুপুর পৌনে দুইটার দিকে ঘণ্টা খানেকের বৃষ্টিতে এমনই ভোগান্তির অবস্থা তৈরি হয় রাজধানীতে। কার্ত্তিক মাসের প্রাক্কালে এই বৃষ্টিপাতকে ‘স্বাভাবিক’ বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে এই স্বাভাবিক বৃষ্টির পানির পানি জমে সড়কে তৈরি হয় অস্বাভাবিক অবস্থার। দুপুরে বৃষ্টি হলেও সন্ধ্যার দিকেও অনেক সড়কে জমে ছিল পানি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃষ্টি থেমে গেলেও অব্যাহত ছিল জনদুর্ভোগ। সড়কে আটকে পড়া পানির কারণে সড়কে গাড়ির গতিও ছিল কম। ফলে নগরবাসীকে চলাচল করতে হয়েছে অনেক বেশি সময় নিয়ে। সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট যানজটে সড়কে কাটাতে হয়েছে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। গণপরিবহনগুলোকে নির্ধারিত রুট বদলে চলতে হয়েছে অন্য রুট দিয়ে। ফলে ঘুরপথে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়েছে নাগরিকদের।

এদিকে ফুটপাত দিয়ে চলতে গিয়েও ভোগান্তিও ছিল চরমে। সড়কে জমা পানি ফুটপাত পর্যন্ত পৌঁছে যায় অনেক জায়গায়। ফলে পথচারীদের চলতে হয়েছে নোংরা সে পানি মাড়িয়ে। আবার কোথাও কোথাও পয়ঃনিষ্কাশন খাল সংগগ্ন এলাকায় খালের পানিও পৌঁছে যায় সড়কে। খাল পাড়ের ওয়াকওয়েতে ছিল এক থেকে দুই ফুট পানি। সে পানি নামতে সময় লেগেছে চার থেকে ছয় ঘণ্টা। রাজধানীর মিরপুর সড়কের বিভিন্ন অংশ, কারওয়ান বাজার, গ্রিন রোড, সেন্ট্রাল রোডসহ ধানমন্ডির কিছু অংশ, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকার বংশাল, নাজিমউদ্দিন রোডসহ আশপাশের এলাকায় জলজট দেখা গেছে।

দুপুরে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে রওয়া হয়েছিলেন মো. সোহেল। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সোহেল মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিং এলাকার বাসিন্দা। বাসা থেকে রিকশা যোগে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পৌঁছতে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার তিনি। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস যোগে বাংলামোটর পৌঁছাতে জলজট ও যানজট উভয় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাকে।

সোহেল জানান, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আসাদগেট আসতে পরতে হয় যানজটে। আসাদগেট সিগন্যাল পয়েন্টে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বাস মিরপুর রোডে পৌঁছায়। মূল সড়কে আসতে যেন গাড়ির গতি আরও কমে গেল। সামনে থাকাতেই দেখা গেল জলজট।

সোহেল বলেন, ‘আসাদগেট পাড় হয়ে মিরপুর রোড দিয়ে বাসটা মানিকমিয়া এভিনিউতে ঢুকবে। কিন্তু মানিক মিয়া এভিনিউতে ঢোকার আগেই পরতে হয়েছে জলজটে। মনে হচ্ছিল যেন কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার মধ্যে প্রায় এক ফুট পানি। মানিক মিয়া এভিনিউ আড়ংয়ের কোণা থেকে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা পর্যন্ত একই অবস্থা। তবে এই সড়কে জানজট ছিল না।’

যানজট আর জলজটের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘মানিক মিয়ার জলজট পেরিয়ে খামার বাড়ি পৌঁছাতে পড়তে হয়েছে যানজট এবং জলজটে। রাস্তায় পানি জমা। গাড়ির গতিও কম। ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজার হয়ে বাংলামোটর যেতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। রাস্তায় গাড়ি চলেছে খুবই ধীর গতিতে।’

জলাবদ্ধতা দেখা গেছে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ওয়াসা কারওয়ান বাজারের ওয়াসা ভবনের সামনে। দীর্ঘসময় জলাবদ্ধতা ছিল ওয়াসার ভবনের পেছনের দিকে কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজার অংশে।

এ জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রম নিয়ে বেশ কয়েকবার প্রশ্ন তুলেছেন দুই সিটি মেয়র। নগরকে জলাবদ্ধতামুক্ত রাখতে পয়ঃনিষ্কাশনের দায়িত্ব নিজেদের হাতে চেয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সম্প্রতি জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ওয়াসার বদলে সিটি করপোরেশনকে দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি বৈঠক ডেকেছিল তবে বৈঠকটি এখনো অনুষ্ঠিত হয়নি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বুধবার রাজধানীতে প্রায় এক ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। এসময় রাজধানীতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ মিলিমিটার। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আশরাফ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, বুধবার রাজধানীতে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তা ‘স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত’। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর এবং আগামী সপ্তাহে টানা তিন থেকে চারদিন দুপুরে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন এই আবহাওয়াবিদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here